আব্দুর রহিম
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, ত্রি ভুবনে নাই। আজ বিশ্ব মা দিবস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, খবরের পাতায়, টেলিভিশনে সব জায়গায় চলছে মা দিবস নিয়ে নানা আলোচনা। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে মা’কে ফোন দিয়ে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আবার অনেকে প্রিয় মা’কে উপহার দিয়ে ছবি তুলে ক্যামেরাবন্দী করেছেন। কিন্তু যাদের মা নেই তারা জানে আজকের এইদিনটি তাদের জন্য কতটা বেদনার এবং কষ্টের। স্বার্থের এই পৃথিবীতে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার জন্য মায়েদের তুলনা শুধু মায়েরা-ই হয়।
ছোটবেলা থেকে পড়াশুনায় একটু ফাঁকিবাজ ছিলাম। পরীক্ষার সময় আসলেই ধুমছে পড়া শুরু হতো। এরপরেও বরাবরের মত প্রথম অথবা দ্বিতীয় হতাম। আর পরীক্ষা আসলে আমার চেয়ে মা খুব চিন্তিত থাকতেন। আশেপাশের বাড়ি থেকে দুধ, ডিম সংগ্রহ করে খাওয়ার জন্য পড়ার টেবিলে এনে রাখতেন। বাবা এইগুলো একটু খেয়ে নাও। দুধগুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। যতক্ষণ না খেতাম মা দাঁড়িয়ে থাকতেন। শীতকালে রাতে ঘুমানোর সময় ছিলাম একটু বেখেয়ালি। কখন ঘুম চলে আসতো নিজেও জানতাম না। গভীররাতে মা মশারী ঝুলিয়ে, গায়ে কাঁথা দিয়ে এরপর ঘুমাতে যেতেন। সকালে উঠে মাঝেমধ্যে নিজেই অবাক হতাম। সকল মায়েরা বুঝি নিজেদের সন্তানের জন্য এমনই হয়! বাবা ছোট বেলা থেকে প্রচুর শাসন করতেন। কিন্তু মা কোনদিনের জন্য একটু বকাও দেননি, এমনকি কখনো গায়ে একটা আছড়ও দিয়েছেন কিনা জানা নেই।
১৯ নভেম্বর ২০১৪ সাল দিনটি ছিলো মার জীবনে সবচেয়ে মর্মান্তিক একটি দিন। এইদিন হারিয়েছি পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটছি। এমন সময় বাড়ি থেকে বড় ভাই ফোন দিয়ে বললেন ‘বাড়িতে আসো! আম্মা বেশি অসুস্থ’। বড় ভাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আমাকে কখনো ফোন দেন না! বড় ভাইয়ের ফোন পেয়ে অনেকটা বিস্মিত হলাম আর মনে জানা হয়ে গেল মা হয়ত পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। বিকাল ৩ঃ৩০ কান্না করতে করতে মেস থেকে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম। বাড়িতে এসে দেখলাম মা এখনো কথা বলতে পারছেন। একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে রাতে ঘুমালাম। ফজরের আজান হলো এরপর শুনি মা আর কথা বলছেন না! ডাক্তার এসে ঘোষণা দিলেন মা মারা গেছেন। এরপর নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। সর্বশেষ মা’কে যখন আমরা তিন ভাই কবরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছি তখন কেমন যেন মনের মধ্যে সব দুংখ এসে ঠাঁই করলো আর কোনদিন মা বলে ডাকতে পারব না। কাঁদতে কাঁদতে কবরে মা’কে নিয়ে চিরদিনের জন্য রেখে আসলাম। মা শব্দটি ঔদিন থেকে আর ডাকার সৌভাগ্য হলো না।
প্রিয় মা,কেমন আছো জানিনা। তবে তোমার সন্তানেরা অনেক ভালো আছে। তুমি আমাদের রেখে এতো অল্প সময়ে না চলে গেলেও পারতে। মরণঘাতী ক্যান্সার এতো দ্রুত সময়ে আমাদের থেকে তোমাকে নিয়ে যাবে কখনো জানা ছিলো না। তোমার ইচ্ছেগুলো হয়ত এখনো সব পূরণ করতে পারেনি। তবে দোয়া করো, ইনশাআল্লাহ তোমার সব চাওয়া পূরণ করব। তুমি অসুস্থ হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ছিলে আমাকে আর ছোট বোনটাকে নিয়ে। ছোট বোনটি শ্বশুরবাড়িতে অনেক সুখে আছে। এখনো প্রতিরাতে তোমার জন্য প্রচুর কান্না করে। আজকের এইদিনে দোয়া করি মহান সৃষ্টিকর্তা তোমাকে জান্নাসবাসী করুক। সকল মায়েদের জন্য রইল শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মায়েরা।
Discussion about this post