শিক্ষার আলো ডেস্ক
এবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ পূর্ব তিমুরে জেন-জি আন্দোলন শুরু হয়েছে। সংসদ সদস্যদের (এমপি) আজীবন পেনশন ভাতা ও বিনামূল্যে গাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে রাস্তায় নামেন দেশটির হাজারও মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিলে তরুণ বা জেন-জি প্রজন্মের।
এদিকে, বিক্ষোভের মুখে এরই মধ্যে পরিকল্পনাটি বাতিল করেছে পূর্ব-তিমুর সরকার। তারপরও রাস্তায় আছেন অন্তত ২ হাজার তরুণ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। সেসময় তারা একটি সরকারি গাড়িতে আগুনে দিয়ে দেন। পুলিশ টিয়ার ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
আন্দোলন শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সরকার দুটি পরিকল্পনা-ই বাতিল করে। তারপরও বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানী দিলিতে প্রায় ২ হাজার জন প্রতিবাদকারী রাস্তায় ফিরে আসেন।
দেশটিতে এই আন্দোলন এমন সময় হচ্ছে, যখন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালে এমন আন্দোলন সরকারের পতন পর্যন্ত ঘটিয়েছে। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়াতেও সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধার বিরুদ্ধে সড়কে নেমেছেন জেন-জি’র তরুণরা।
পূর্ব-তিমুরে আইনপ্রণেতাদের গাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা নতুন কিছু নয়। ২০০০ এর দশক থেকে নিয়মিতভাবে এই বিষয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা সেজারিও সেজার বিবিসিকে জানান, ২০০৮ সালে সরকার ৬৫ জন এমপির জন্য ১০ লাখ ডলার খরচ করে নতুন গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করেছিল। তখনো ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে নামে ও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
কিন্তু এবার আন্দোলন প্রকৃত অর্থে বড় রূপ নিয়েছে। দেশটি এখন সামাজিক বৈষম্য ও বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে।
৩০ বছর বয়সী এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আরও জানিয়েছেন, সরকার আগে থেকেই সংসদ সদস্যদের গাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু নতুন গাড়ি কেনার পরিকল্পনা থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ। তার বক্তব্য, আগের গাড়িগুলো এখনো ভালো অবস্থায় রয়েছে।
৪২ বছর বয়সী ট্রিনিটো গায়ো ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, গুঞ্জন উঠেছে, গাড়িগুলো এরই মধ্যে পথে রয়েছে। এজন্যই আমরা সবাই এখানে রয়েছি, যাতে আমার করের টাকা ভুল জায়গায় না যায়। প্রতিবাদকারীরা অবসরপ্রাপ্ত এমপিদের জীবনকালীন ভাতা বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন।
পূর্ব তিমুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অন্যতম তরুণ দেশ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়, এখানে ৩৫ বছরের নিচে জনগণের সংখ্যা ৭০ শতাংশের বেশি। এটি এই অঞ্চলের দরিদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ‘গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দেশটির সাবেক মন্ত্রী ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সভাপতি ফিদেলিস লেইটে মাগালহাইস বিবিসিকে জানান, আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত মনে করে, প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই একটি অংশ। দিলিতে জীবন স্বাভাবিক, এটি সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের মধ্যে একটি হলেও সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে না।
Discussion about this post