সেরাতুল মুস্তাকীম
আশুরা হচ্ছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। এই আশুরা ঘীরে ইসলামে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস এবং বিশেষ ফজিলত পূর্ন কাজ। আজ আমরা বাংলাভোরের এই পোস্টে আশুরার এই বিষেয সকল প্রয়োজনীয় তথ্য় সমন্ধে জানতে চলেছি আর এর ইবাদাত ও তার ফজিলত সমন্ধেও জানতে চলেছি।
আশুরা কী?
আশুরা হচ্ছে ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন দিন এবং ফজিলত পূর্ন দিন। আর এই দিনটি আরবি (ইসলামিক) ক্য়ালেন্ডারের প্রথম মাস মুহাররম মাসের ১০ তারিখ কে নির্ধারিত করা হয়েছে। আর এটি প্রতিবছর ই ইসলামিক ভাবে বিশেষ কিছু প্রক্রিয়ায় পালন করা হয়।
পবিত্র আশুরার ইতিহাস
প্রতিটি দিন ই পবিত্র। কোন দিনের ই আল্লাহ কোন অপবিত্রতা রাখেন নি আর কোন দোষ ও রাখেন নি। তবে বিশেষ কিছু দিনের মর্যাদা বেশি রেখে আমাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।
ঠিক তেমন ই একটি পবিত্র আর ফজিলত পূর্ন দিন হচ্ছে মুহাররম মাসের ১০ তারিখ (আশুরা) আর এই দিনে আল্লাহ তার বিভিন্ন রহমত বর্ষন করে দুনিয়াতে। আর এর পেছনে বিশেষ কিছু কারণ আছে। যদিও আমরা সেই সকল কারণগুলো একসাথে বর্ননা করতে পারব না, তবে এখানে শর্ট পয়েন্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করে দিতে পারি।
যে সকল বিশেষত্ব রয়েছে এই আশুরা কে ঘিরে, তার সংক্ষিপ্ত রূপরেখাগুলো এখানে তুলে ধরা হলোঃ
- হজরত আদম (আ.) – এই দিনে তাঁর তওবা কবুল হয়।
- হজরত নূহ (আ.) – নৌকা জুদি পর্বতে অবতরণ করে।
- হজরত ইবরাহিম (আ.) – আগুন থেকে মুক্তি পান।
- হজরত আইয়ুব (আ.) – কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন।
- হজরত ইউনুস (আ.) – মাছের পেট থেকে মুক্তি পান।
- হজরত মূসা (আ.) – বনি ইসরাইলসহ ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি পান এবং ফেরাউন ডুবে যায়।
- হজরত ঈসা (আ.) – আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয় বলে মত আছে।
- হজরত ইউসুফ (আ.) – কারাগার থেকে মুক্তি পান।
- মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) পরিবারসহ শাহাদত বরণ করেন।
- রাসুল (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদেরও তা রাখতে উৎসাহিত করতেন।
- হজরত হোসাইন (রা.) – কারবালার প্রান্তরে শহিদ হন হিজরি ৬১ সালের ১০ই মহররম।
- কিয়ামাত সংঘটিত হবে এই আশুরার দিনে।
আরো ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে এই আশুরা (মুহাররম ১০ তারিখ) এর উপরে। তার জন্যই মহান আল্লাহ এই দিনটি পৃথিবীর অন্যতম একটি বরকত পূর্ণ দিন হিসেবে ধরে দিয়েছে।
যানা যায়, পূর্ববর্তি রাসূলদের সময়ে এই আশুরাকে ঘীরে রোজা রাখা হতো, আর এই রোজা ফরজ (বাধ্যকতা) ছিল। তবে হযরত মুহাম্মাদ স. এর নবুয়্যাতের পরে এটি ফরজ থেকে সরে যায় আর রমজান মাসের পূর্ণ মাসকে ফরজ রোজা হিসেবে নির্ধারন করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়, এই আশুরার রোজা যদিও ফরজ (বাধ্য) নয়। কিন্তু এটির সেই ফজিলত কোন অংশেই কমে যায়নি।
আশুরার ফজিলত
প্রতিদিনের আমলের ই রয়েছে অসংখ্য ফজিলত। তবে এই দিনে যেহেতু বিভিন্ন ইতিহাসের জন্য ইসলামে একটি রেড করা দিন হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই এই দিনে বিশেষ কিছু আমল কে নির্ধারন করা রয়েছে।
তবে বর্তমান সময়ে এই আমলের সাথে কিছু কিছু অঞ্চলে আংশিক বেশি কম করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এখানো শিরকের মতো ভয়াবাহ রূপেও দেখা যেতে পারে। তাই এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক হয়ে এই বেশি কম আমলের দিকে আগাতে হবে। কেননা যদি খারাপ কাজ করেন, তাহলে সেটি ভালো কাজের উপকারিতা থেকেও বেশি ভয়াবাহ দিকে নিতে পারে।
আশুরার বিশেষ কয়েকটি ফজিলত আমরা লিস্টের মাধ্যমে সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যাতে সকল ফজিলত সমন্ধে সহজে জানতে পারেন। আশুরার সকল ফজিলাতগুলো সহজ ভাবে দেওয়া তালিকাঃ
- রাসুল (সা.) বলেন: “রমজান মাসের পরে সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।” – (সহিহ মুসলিম)
- আশুরার দিনে রোজা রাখলে আগের এক বছরের ছোট খাটো গোনাহ মাফ হয়ে যায়। – (সহিহ মুসলিম, হাদিস)
- রাসুল স. তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরও এই রোজা রাখতেন এবং সাহাবীদের উৎসাহিত করতেন।
- এই দিনে অনেক নবীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে (যেমন: মূসা (আ.)-এর বিজয়), তাই ইবাদতের জন্য এটি বিশেষ দিন।
- দান-খয়রাত, ইবাদত-বন্দেগি, তওবা, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে অসংখ্য সাওয়াব অর্জনের সুযোগ।
-
তাওবা করা :
- তাওবা কবুল হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি, নিরাপত্তা এবং সাহায্য লাভ করার ইতিহাস জুড়ে আছে মুহাররম মাসের সাথে। হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে নির্দেশ দেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোজা রেখো। কেননা মুহাররম আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তায়ালা (অতীতে) অনেকের তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অনেকের তাওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি : ৭৪১)। হাদিস বিশারদগণের মতে- উক্ত হাদিসে যেদিনের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি খুব সম্ভব আশুরার দিন। তবে মানুষের উচিৎ প্রাত্যহিক জীবনে তাওবা-ইস্তিগফারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।
আশুরার রোজা
আশুরার রোজা ১ টি ছিল, তবে নবি স. বলেছিলেন তিনি পরবর্তি বছর থেকে ২ টা করে রাখবে যাতে করে অন্যান্য ধর্ম থেকে এই বিষয়টা আমাদের ভিন্নতা পায়। এর পর থেকেই আশুরা (১০ মুহাররম) দিন এবং তার সাথে যুক্ত করতে আগের দিন (৯ মুহাররম) অথবা পরের দিন (১১ মুহাররম) রোজা রাখা হয়।
যদি আপনি আশুরার সাথে তার আগের দিন রোজা রাখতে চান তাহলে কি করতে পারেনঃ
৯ মুহাররম বা মুহাররমের ৯ তারিখে রোজা রাখবেন এবং আশুরা বা ১০ মুহাররম রোজা রাখবেন। এই দুদিন রোজা রাখতে হবে।
যদি আপনি আশুরার পরের দিন রোজা রাখতে চান, তাহলে কি করতে হবেঃ
আপনি আশুরা বা ১০ মুহাররম রোজা পালন করবেন এবং তার পরের দিন ১১ মুহাররম রোজা পালন করবেন। তাহলেও ২ দিন হবে।
আশুরার রোজার ফজিলত
অসংখ্য কুরানের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে এই আশুরা সমন্ধে আমরা জানতে পারি এই দিন একটি বিশেষ দিন। তার জন্য এই দিনের প্রতিটি আমলকেই একটু ভিন্ন ধারায় গুরুত্ব বা ফজিলত দেওয়া হবে এটাই সাভাবিক বিষয়। তবেও কিছু কিছু স্থানে এই বিশেষ দিনের বিশেষ আমলের বিশেষ ফজিলত সমন্ধে জানতে পারি, আর সেগুলো জেনে নিতে পারলে আরো বেশি ভালো লাগে, আগ্রহ বাড়তে পারে আমল করার জন্য।
হাদিসে যে সকল স্থানে এই আশুরার রোজার ফজিলাত বর্ননা করা রয়েছে, সেগুলো তালিকা করা হলো, তার সাথে আরো অনেক স্থানে থাকতে পারে, যা হয়তোবা আগামীতে আমরা এখানে যুক্ত করার চেষ্টা করবো।
“আমি আশা করি, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের (ছোটখাটো) গুনাহ মাফ করে দেয়।”
— সহিহ মুসলিম, হাদিস: 1162
“আমরা মূসার প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার।”
এবং তিনি নিজেও রোজা রাখেন। – সহিহ বুখারি ও মুসলিম
রাসুল (সা.) বলেন:
“রমজান মাসের পর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।”
— সহিহ মুসলিম, হাদিস: 1163
আশুরার রোজা ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম – দুটি দিন রাখতে রাসুল (সা.) উৎসাহ দিয়েছেন যাতে মুসলমানরা ইহুদিদের অনুসরণ না করে।
আশুরার রোজার নিয়ত কি
আশুরার রোজার জন্য বিশেষ কোন নিয়াতের প্রয়োজন হয় না। সাভাবিক ভাবে আপনি মনে করে রোজা রাখতে পারেন যে “আমি এই রোজাটি আশুরার জন্য রাখছি।”, তবে যদি কেউ আরবিতে পারেন, সে আরবিতেও বলতে পারেন, কিন্তু আরবি বলতে গিয়ে ভুল বলার থেকে বাংলায় বলা বা মনে মনে ইচ্ছে প্রকাশ করাই উত্তম কাজ হবে।
লেখক- আরিফুল দারিয়া
Discussion about this post