অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের সাঁতার ইতিহাসে যোগ হলো আরো একটি গৌরবগাঁথাময় স্বীকৃতি। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর আবারও ইংলিশ চ্যানেল জয় করলেন বাংলাদেশের দুই সাহসী সাঁতারু—মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এবং ইংল্যান্ড সময় রাত আড়াইটায় তারা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার অভিযান শুরু করেন, যা সফলভাবে শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় ১২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। ইংলিশ চ্যানেল দৈর্ঘ্যে ৩৫০ মাইল (৫৬০কি.মি.)।
সাবেক অলিম্পিয়ান সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর জানান, এটি ছিল একটি রিলে দল, যেখানে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন তিনি এবং নাজমুল হক হিমেল। বাকি চারজনের মধ্যে ছিলেন একজন মেক্সিকান ও তিনজন ভারতীয় সাঁতারু। রিলে পদ্ধতিতে প্রতিটি সাঁতারু নির্ধারিত সময় ও দূরত্ব সাঁতরে শেষ করেন। সাগর জানান, তিনিই প্রথম সাগরে নেমেছিলেন এবং গোটা দল সমন্বিতভাবে সফলভাবে চ্যানেলটি অতিক্রম করেছে।
তবে এই অভিযানে পেছনে ছিল নানা বাধা-বিপত্তি। নির্ধারিত স্লট ছিল জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে, কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেশ কয়েকবার সময় পেছাতে হয়। শেষ পর্যন্ত ২৯ জুলাই মধ্যরাতে শুরু করে তাঁরা পার হন বিশ্বের অন্যতম কঠিন জলপথটি।

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান সাগর। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত এবং রিলে দুই ধরনের স্বীকৃতিই নভেম্বরের দিকে দেওয়া হয়। তবে ইংলিশ চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে পাড়ি দেওয়া ব্যক্তিদের নাম দ্রুতই প্রকাশ করে।’
অভিযান শুরুর আগে নিজের অনুভূতি জানিয়ে সাগর লিখেছিলেন এক আবেগঘন বার্তা: “এটা কেবল আমার একার না—এটা তুমি, এটা আমরা, এটা বাংলাদেশ। ৩৭ বছরের প্রতীক্ষা শেষে আমরা আবারও ইংলিশ চ্যানেলে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরতে যাচ্ছি। এটি বহুদিনের স্বপ্ন, পরিকল্পনা আর অধ্যবসায়ের ফসল। চলো একসঙ্গে এগিয়ে যাই।”
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনজন সাঁতারু- ব্রজেন দাস, ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট তিনি এককভাবে এই চ্যানেল পাড়ি দেন। আব্দুল মালেক ও মোশাররফ হোসেন—ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক এবং সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে মুন্সিগঞ্জের সাঁতারু মোশাররফ হোসেন ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন।
তাদের পথ ধরেই এবার ৩৭ বছর পর আবারও বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরলেন সাগর ও নাজমুল।
সাগর ও হিমেলের এই কৃতিত্ব শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্যও এক অসামান্য অর্জন। এই দুই সাহসী সাঁতারু প্রমাণ করলেন—চেষ্টা আর সাহস থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করে জয় করা যায়।
Discussion about this post