তপু রানী সাহা
মোবাইল ডাটার মূল্য হ্রাসের সরাসরি প্রভাব পড়েছে মোবাইল অপারেটর রবির আয়ে।পাশাপাশি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চলমান অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে টেলিযোগাযোগ খাতের মত রবির আর্থিক ফলাফলেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর এ পরিস্থিতিতে রবি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তার আয়ের ৭০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ায় প্রভাবটি আরো প্রকট হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫মে) প্রকাশিত ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই প্রান্তিকে রবির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ২,৩৪১.১ কোটি টাকা, যা এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় ০.৬% এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭% কম। ভয়েস ও ডাটা- উভয় খাতেই আয় কমেছে প্রতিষ্ঠানটির। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রবির আয় কমেছে ভয়েসে ০.৭% এবং ডাটায় ১১.৪%।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে রবির আয়কর, অবচয় ও অ্যামর্টাইজেশন পূর্ববর্তী আয় (ইবিআইটিডিএ) ৪৭.৫% মার্জিনসহ দাঁড়িয়েছে ১,১১০.৯ কোটি টাকায়। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে মার্জিন কমেছে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রবির কর-পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) হয়েছে ১২৫.৫ কোটি টাকা,যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন-এমএনসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে নিল রবি
ডাটার দাম ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির চাপ ও পরিচালন ব্যয় বাড়ার কারণে রবির ইবিআইটিডিএ মার্জিন কমেছে। আর ইবিআইটিডিএ মার্জিন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ও সরকারি কোষাগারে গত প্রান্তিকের তুলনায় বেশি অর্থ পরিশোধ করার কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পিএটি কমেছে রবির।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে রবির সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটি ৬৪ লাখ, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৩.৭ লাখ ও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ লাখ কম। রবির ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৫ লাখ, আর ৪জি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৬৭ লাখ। ৭৫.৫% সক্রিয় গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর সক্রিয় গ্রাহকদের ৬৫% ফোর-জি ব্যবহার করেন। সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যার অনুপাতে এ দুটোতেই ইন্ডাস্ট্রিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে রবি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সিমের ওপর কর ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করা হয়। এই পরিবর্তন এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গ্রাহক সংখ্যা কমে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে হারানো গ্রাহক সংখ্যা পুনরুদ্ধার ও নতুন গ্রাহক আকর্ষণে সতর্কতার সাথে কাজ করে আসছে রবি।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে ১৮ হাজারেরও বেশি সক্রিয় ফোর জি সাইটের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৮.৯৭% জনসংখ্যার জন্য ফোর-জি কভারেজ নিশ্চিত করেছে রবি। এই প্রান্তিকে বিভিন্ন খাতে রবির মূলধনী বিনিয়োগ ছিল ৭৪.৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রবির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.২৪ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.৬% বেশি।
গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে রবির গড় মাসিক ডাটা ব্যবহার আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ৪.৩%। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৮. ১%। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে রবি সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ১,৬২৭.৯ কোটি টাকা, যা ওই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মোট আয়ের ৭০%।
রবির ভারপ্রাপ্ত সিইও এবং চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার এম রিয়াজ রশিদ বলেন,“গত এক বছরে আমরা ডাটার দাম প্রায় ২০% কমিয়েছি। এর ফলে ডাটা ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও রবির রাজস্ব বৃদ্ধির গতি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। অর্থনৈতিক স্থবিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।মূল্যস্ফীতি ও কিছু অনিবার্য ব্যয় বৃদ্ধি আমাদের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে সিম কর বাড়ার প্রেক্ষাপটে আমরা নতুন গ্রাহক সংগ্রহে সতর্কভাবে এগিয়েছি, যাতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি, অর্থনীতি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে। তবে ডাটার দাম ব্যাপক হারে কমে আসা আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
Discussion about this post