খেলাধূলা ডেস্ক
টেস্ট নেতৃত্বে ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য পথচলায় আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন শুবমান গিল। একই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করে ভারত অধিনায়ক নাম লেখালেন আরও অনেক রেকর্ডে।মাত্র ২৫ বছর বয়সে ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক শুবমান গিল যা করে দেখালেন, তা বিগত ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কোনো ব্যাটার পারেননি। এই অনন্য রেকর্ড গড়ার পথে গিল হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার, যিনি এক টেস্টে একটি ইনিংসে ২৫০ এবং আরেক ইনিংসে ১৫০ রানের বেশি করেছেন।প্রথম ইনিংসে শুবমান গিলের ২৬৯ রানের ইনিংস ছিল টানা ধৈর্যের পরীক্ষার ফল। প্রায় আট ঘণ্টা উইকেটে থেকে অফসাইডে একের পর এক নিখুঁত ড্রাইভে মোহিত করেছেন ক্রিকেট বোদ্ধাদের।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে এই যুগলের স্বাদ পেয়েছেন গিল। প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রানের পর চতুর্থ দিন ১৬২ বলে ১৬১ রান করেছেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ম্যাচে তার মোট রান ৪৩০।
এক টেস্টে গিলের ৪৩০ রান এখন পর্যন্ত ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৯৯০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ করেছিলেন ৪৫৬ রান (৩৩৩ ও ১২৩)। গিলের ইনিংস দুটি—২৬৯ ও ১৬১—মিলে উঠে এসেছে ঠিক তার নিচে।
এই ইনিংসে নিজের গুরু বিরাট কোহলিকেও টপকে গেছেন গিল। কোহলির অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর ছিল ২৫৪, যা এখন পেছনে ফেলেছেন গিল ২৬৯ রানের ইনিংসে।
১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে স্রেফ নবম ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন গিল। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তার আগে এই স্বাদ পান কেবল সুনিল গাভাস্কার। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪ ও ২২০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে গিলের আগে এই কীর্তি গড়তে পারেন কেবল গ্রাহাম গুচ। ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে ৩৩৩ ও ১২৩ রান করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
অধিনায়ক হিসেবে একই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি গিলের আগে করতে পারেন শুধু গুচ।
দেশের বাইরে এক টেস্টে সর্বোচ্চ রান অবশ্য গিলের এই ৪৩০। এখানে আগের সর্বোচ্চ ছিল অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক টেইলরের ৪২৬, পাকিস্তানের বিপক্ষে পেশাওয়ারে ১৯৯৮ সালে।
উপমহাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে এক টেস্টে তিনশর বেশি রান করলেন গিল। ১৯৭১ সালে এজবাস্টনেই পাকিস্তানের জাহির আব্বাসের ২৭৪ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
এই সিরিজ শুরুর আগে শুবমান গিলের গড় ছিল মাত্র ৩৬। হায়দরাবাদ টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ‘ডাক’ মারার পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন তার জায়গা নিয়ে। তবে কোচ রাহুল দ্রাবিড় ভরসা রেখেছিলেন। সেই ভরসার প্রতিদান গিল দিয়েছেন বিশাখাপত্তনম, ধর্মশালা আর এজবাস্টনের ব্যাটিং দিয়ে। এখন তার গড় ছাড়িয়ে গেছে চল্লিশের ঘরেও।
এই সিরিজে এরই মধ্যে ৫৮৫ রান করে ফেলেছেন গিল। সামনে সুযোগ আছে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের এক সিরিজে ৯৭৪ রানের কিংবদন্তি রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলার।
ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছেন, ‘গিল এক কথায় ভয়ংকর। একজন বোলার হিসেবে ব্যাটারের দুর্বলতা খুঁজি, কিন্তু ওর খেলায় কোথাও ফাঁক খুঁজে পাওয়া যায় না। স্টাইল, দৃঢ়তা ও দায়িত্ববোধ—সবই অসাধারণ।’
Discussion about this post