শিক্ষার আলো ডেস্ক
তিন দফা দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যেখানে রুয়েট-কুয়েটে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, আমাদের বুয়েট প্রশাসন সেখানে নীরব। আমাদের দাবি হচ্ছে বুয়েট প্রশাসন আমাদের তিন দফার পক্ষে স্টেটমেন্ট দেবে। আমাদের সঙ্গে বুয়েট প্রশাসনের একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে এবং আমাদের সঙ্গে যে বৈষম্য হচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে, সেই স্টেটমেন্টটা উঠিয়ে নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটা চিঠি পাঠাবে, যেখানে আমাদের দাবিগুলো উল্লেখ থাকবে।
তাদের অভিযোগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত পদোন্নতির কারণে বিএসসি প্রকৌশলীদের এন্ট্রি লেভেলের পদসংখ্যা সংকুচিত হচ্ছে। ডিপ্লোমাধারী উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ কোটার মাধ্যমে সহকারী প্রকৌশলী (৯ম গ্রেড) পদে অতিরিক্ত পদোন্নতি দেওয়ায় বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য এই পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ কমে যাচ্ছে। এমনকি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও তা বাতিল করে ডিপ্লোমাধারী উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির হার শূন্য পদের ৩৩% উল্লেখ থাকলেও, তা লঙ্ঘন করে ৪০% থেকে ১০০% পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধানের ‘সুযোগের সমতা’ নীতির পরিপন্থী।
শিক্ষার্থীরা আরো উল্লেখ করেন, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শুধু কোটার মাধ্যমে অনেক ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তি ৯ম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী (বিসিএস ক্যাডার) পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন এবং বিসিএস প্রকৌশল ক্যাডারের সদস্যদের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করছেন। উদাহরণস্বরূপ, ৪৭তম বিসিএসে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে মাত্র একটি পদ থাকলেও, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের স্মারক অনুযায়ী মোট ২৯ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটিকে বিএসসি প্রকৌশলীদের পেশাগত অধিকার হরণ এবং প্রকৌশল পেশাকে মর্যাদাহীন করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে তারা অভিহিত করেন।
ওই বিক্ষোভ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে দাবিগুলো তুলে ধরেন তারা।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিগুলো হলো-
১. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনও পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেয়া যাবে না।
২. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষাতে ডিপ্লোমা ও একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর যোগ্যতাসম্পন্ন বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
৩. বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অন্যান্য দেশের মতো যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন এক্রিডিটেড বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিএফ এক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
এর আগে বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরও দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ নানা স্লোগান দেন।
Discussion about this post