শিক্ষার আলো ডেস্ক
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রকৌশল অনুষদের ২ বিভাগের ৩১ জন শিক্ষার্থী ডিন’স অ্যাওয়ার্ড এবং ১২ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৩১ জন শিক্ষার্থীকে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া, দুইটি বিভাগের মোট ১২ জন মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (০৮ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় প্রকৌশল অনুষদের হলরুমে এ অ্যাওয়ার্ড ও বৃত্তি দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. তোফায়েল আহমেদ এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাছান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান।
এসময় বক্তারা শিক্ষার্থীদের মেধা, পরিশ্রম ও অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কারকে একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা মেধায় ও জ্ঞানে এগিয়ে থাকলেও প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। এই জায়গাটা আমাদের উন্নত করতে হবে। জ্ঞান অর্জন যথেষ্ট নয়, সেই জ্ঞান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রকাশ করতে জানতে হবে। এজন্য আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করছি ক্লাসে নিয়মিত প্রেজেন্টেশন, ভাইভা ও আলোচনার ব্যবস্থা করুন, যাতে শিক্ষার্থীরা কথাবলার জড়তা কাটিয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারে। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীদের আরো পরিশ্রমী হতে হবে। টেকনিক্যাল বিষয়ে কোনো শর্টকাট নেই। শেখার জন্য সময় দিতে হবে, ল্যাবে মনোযোগী হতে হবে। সকালে তত্ত্বীয় ক্লাস, বিকেলে ল্যাবের এই নিয়ম বজায় রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে, নতুন ২ টি বাস যোগ করা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে আসা-যাওয়া করতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় যেন দুপুরের পরেও সচল থাকে—ল্যাবে কাজ চলবে, আলো জ্বলে থাকবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। পাশাপাশি, শিক্ষকদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা গেলে শিক্ষার মান আরো বাড়বে, শিক্ষকরা নিজেদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরবর্তীতে আরো উন্নতভাবে পাঠদান করতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে থাকবে এবং দেশের অন্যতম সেরা অনুষদে পরিণত হবে।
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, প্রকৌশল অনুষদের এই সুন্দর আয়োজনের জন্য আমি ডিন স্যার সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই অনুষ্ঠানকে আমি বলব অর্জনের স্বীকৃতি যা কেবল সাফল্যের চিহ্ন নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য নতুন অঙ্গীকারের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়েছে, তারা সবাই মেধাবী। আর আজ যারা বৃত্তি বা পুরস্কার পেয়েছে, তারা মেধার সঙ্গে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে, বড় অর্জনের জন্য শুধু মেধা যথেষ্ট নয়—এর সঙ্গে দরকার মন, মেহনত এবং মুহূর্তকে কাজে লাগানোর সক্ষমতা। আমি সবসময় বলি, মহৎ অর্জনের চারটি ‘ম’ হলো—মন, মেধা, মেহনত ও মুহূর্ত। এই চারটি গুণ যদি শিক্ষার্থীরা ধরে রাখতে পারে, তবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সাফল্য তাদের নিশ্চিত।’
তিনি আরো বলেন, কেউ উদ্যোক্তা হবে, কেউ গবেষক বা শিক্ষক, কেউ প্রশাসনে নেতৃত্ব দেবে—যে যেভাবেই কাজ করুক, সেটি যেন দেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আজকের এই পুরস্কার শুধু স্বীকৃতি নয়, এটি আমাদের দায়িত্ববোধের প্রতীক।
এসময় প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান বলেন, এই ডিনস অ্যাওয়ার্ড হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্নের প্রকাশমাত্র। সেই স্বপ্নকে পরিপূর্ণ করার ক্ষুদ্র প্রয়াসই আমাদের এই আয়োজন। উচ্চ শিক্ষার জন্য এই অ্যাওয়ার্ড সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। প্রকৌশল অনুষদের এই প্রথম অনুষদভিত্তিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান, যার ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
Discussion about this post