মাত্র তিন মাসে বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে রোগাক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ১৬৪ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৫০ জন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, প্রচলতি ওষুধের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস নিরাময় সম্ভব।
বিজ্ঞানী দলটির দাবি, ক্লোরোকুইন এবং লোপিনাভার নামক ওষুধ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ওষুধ দুটি ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন প্রফেসর ডেভিড পেটারসন। তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ দুটি ইতোমধ্যে টেস্টটিউবে ভাইরাসটি নিশ্চিহ্ন করার সক্ষমতা দেখিয়েছে। এটি একটি সম্ভাব্য কার্যকর চিকিৎসা। থেরাপি শেষ হওয়ার পরে রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস থাকবে না।
গবেষকদল রোগীর ওপর এই ওষুধের সক্ষমতা পরীক্ষা করতে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে একটি ক্লিনিক্যাল স্টাডি চালাবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে পেটারসন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা যা করতে চাই তা হলো- অস্ট্রেলিয়াজুড়ে একটি বিশাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো; অন্তত ৫০টি হাসপাতালে। আমরা যা করতে যাচ্ছি তা হলো একটি ওষুধ, বনাম অন্য ওষুধ, বনাম দুটি ওষুধের সংমিশ্রণ।’
এ মাসের শেষের দিকে স্বেচ্ছাসেবী রোগীদের মাধ্যমে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করা হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চীনা রোগীদের ইতোমধ্যে এইচআইভি ওষুধ দেওয়া হয়েছে এবং প্রাথমিক ফল ইতিবাচক মিলেছে।
প্রফেসর পেটারসন বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকেরা খুব আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, এইচআইভি ওষুধ আসলে নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। কিন্তু শুরুতে কিছুটা সংশয় ছিল। কেননা নতুন ওষুধ পরীক্ষায় যেসব উপাদান যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন সেভাবে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি।’
তবে এই গবেষণা এগিয়ে নেওয়ার আশ্বাস মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল ওষুধ ক্লোরোকুইন অথবা এইচআইভি দমনের মিশ্র ওষুধ রিটোনাভি কিংবা উভয় ওষুধের সংমিশ্রণ করোনাভাইরাস নিরাময়ে সাফল্য এনে দেবে।
তথ্যসূত্র: মিরর
করোনায় সফল ওষুধ কিউবার ‘আলফা টু–বি’
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ নামে পরিচিত কিউবার এক ওষুধ করোনার মুক্তিতে ব্যাপক কাজ করছে। চীনের চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে এই ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন।
ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়কিউবা ফারমা গ্রুপের সভাপতি এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘আলফা টু-বি’ ওষুধ ব্যবহার করে এক হাজার পাঁচশোরও বেশি রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা। করোনা রোগ প্রতিরোধের জন্য চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের নির্বাচিত ৩০টি ওষুধের মধ্যে অন্যতম এটি। আমাদের হাতে চীনে সংক্রমিত সকল রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ রয়েছে। সূত্র: ওয়ান কিউবা নিউজ
ওষুধটির আবিষ্কার হয় কিউবায়। চীনের জিলিন প্রদেশে অবস্থিত চ্যাংচুন হেবার বায়োলজিক্যাল টেকনোলজিতে এটির উৎপাদন হয়। জৈবপ্রযুক্তিতে দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের মধ্যে এক চুক্তির অংশ হিসেবে এটি যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে।
(১৩ মার্চ) এডুয়ার্ডো মার্তনেজ জানান, কিউবায় উত্পাদিত ২২ টি ওষুধ করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মোকাবেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই ওষুধ কয়েক হাজার মানুষের চিকিত্সা সেবা দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। তবে উত্পাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
কিউবার ওষুধ শিল্প হাজার হাজার সম্ভাব্য করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিত্সা করতে প্রস্তুত। তারা উৎপাদন বৃদ্ধি করার গ্যারান্টিও দিয়েছে। এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ জানিয়েছেন, করোনা মোকাবেলার ওষুধ সরবরাহ করার জন্য অনেক দেশেই অনুরোধ করছে। আমরা ওষুধ সরবরাহ করবো। কারণ আমাদের প্রয়োজনীয় সামর্থ্য রয়েছে। এতে দেশে ওষুধ সঙ্কটে পড়বে না।
কিউবার এই ওষুধের কার্যকারিতা জানার পরেই জনপ্রিয় হয়ে যায় ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’। এরপর থেকে সারা বিশ্ব থেকে এই ওষুধ কেনার অর্ডার পেতে শুরু করে কিউবা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ল্যাটিন আমেরিকান, ক্যারিবীয় ও ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশ কিউবার কাছ থেকে চিকিৎসা সহায়তার অনুরোধ করেছে।
সারা বিশ্বের বিপুল সংখ্যক দেশ থেকে এই ওষুধ বিক্রির অনুরোধ পাওয়ার পরেই এর উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে চলেছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, সিআইজিবির হাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও মিটাতে পারবে।
কিউবা ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ পানামা ও ভেনিজুয়েলায়সহ ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে পাঠিয়েছে। যাদের ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। চিকিৎসা কর্মী, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও করোনভাইরাস সংক্রমিত লোকদের চিকিৎসা পরিকল্পনা পাঠিয়ে সহায়তা করার জন্য কিউবাকে অনুরোধ করেছে জামাইকা, সেন্ট কিটস অন্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডার সরকার।
এদিকে, সবার অনুরোধ রাখতে চলেছে কিউবা। দেশটির ওষুধ শিল্প ইন্টারফেরন আলফা টু-বিসহ করোনার চিকিৎসা করা যায় এমন ২২ ধরনের ওষুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে।
Discussion about this post