ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনে শুরু হয় করোনাভাইরাসের আক্রমণ। এরপর এটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ৬৭ দিনের মাথায় এক লাখ লোকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মার্চের শেষ দিকে এটি বাড়তে শুরু করে। তিন মাসের মাথায় ৩১ মার্চে আট লাখ ছাড়ায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা। আর এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনেই করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ লাখ। অর্থাৎ সারা বিশ্বে দিনে প্রায় ৮০ হাজার ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষ। আর বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে। এপ্রিলে গড়ে প্রতিদিন ৮০ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন রোগীর এ চাপে অধিকাংশ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বলছে, চার দিন ধরে টানা করোনা শনাক্ত বাড়ছে এ দেশে। এ সময়ে পরীক্ষার সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ১ হাজার ২৩১ জনের। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ এপ্রিল। তবে এর পরদিন ১৬ এপ্রিল এক দিনেই আরও ৩৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে দেশে।
ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসের তেজ বাড়তে থাকে এপ্রিলে এসে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ এক লাখের বেশি লোকের করোনা শনাক্ত হয়। আর সর্বশেষ ১০ এপ্রিল শনাক্ত হয় ৯৬ হাজারের বেশি। এর পর টানা চার দিন আগের চেয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু ১৫ এপ্রিল এটি আবার বেড়ে যায়। এর মধ্যে ১১ এপ্রিল ৭৯ হাজার, ১২ এপ্রিল ৭৫ হাজার, ১৩ এপ্রিল ৭০ হাজার ও ১৪ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্ত হয় প্রায় ৫৮ হাজার মানুষের। আর ১৫ এপ্রিলে এটি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮০ হাজার।
বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্তের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুরুতে করোনা শনাক্তে চীন এগিয়ে থাকলেও ধীরে ধীরে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রে চলে আসে ইউরোপ। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে করোনা মোকাবিলায়। তবে এপ্রিলে সব ছাপিয়ে শীর্ষে চলে আসে উত্তর আমেরিকা তথা বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এখন দেশটি করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল বুধবার পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৬৯৬ জনের। আর দেশটিতে করোনায় প্রাণহানি ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনা শনাক্ত হওয়া শীর্ষ পাঁচটি দেশ ইউরোপের। এর মধ্যে স্পেনে শনাক্ত ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩৩ জন ও মৃত্যু ১৮ হাজার ৫৭৯ জন, ইতালিতে শনাক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৮ ও মৃত্যু ২১ হাজার ৬৭ জন, জার্মানিতে শনাক্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২১ ও মৃত্যু ৩ হাজার ৫০২ জন, ফ্রান্সে শনাক্ত ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৬২ ও মৃত্যু ১৫ হাজার ৭৫০ জন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ৯৪ হাজার ৮৫২ ও মৃত্যু ১২ হাজার ১৩১ জন।
এর পরের তিনটি দেশ এশিয়ার চীন, ইরান ও তুরস্ক। এর মধ্যে চীনে নতুন শনাক্তের হার এখন অনেক কম। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চীনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৫ জনের ও মারা গেছে ৩ হাজার ৩৪৬ জন। দেশটিতে ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে গেছে ৭৮ হাজারের বেশি করোনা রোগী। আর ইরান ও তুরস্কে এখনো বাড়ছে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত ইরানে শনাক্ত হয়েছে ৭৬ হাজার ৩৮৯ ও মারা গেছে ৪ হাজার ৭৭৭ জন এবং তুরস্কে শনাক্ত ৬৫ হাজার ১১১ ও মারা গেছে ১ হাজার ৪০৩ জন।
সুস্থ হওয়ার সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে চীন। বিশ্বজুড়ে ৫ লাখ ১ হাজার ২০৬ জন সুস্থ হয়েছে। এর মধ্যে চীনে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭৮ হাজার ৩০৭ জন। এরপর সবচেয়ে বেশি সুস্থ হয়েছে জার্মানিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সেরে উঠেছে ৭২ হাজার ৬০০ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রে সুস্থ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৩ জন, স্পেনে ৭০ হাজার ৮৫৩ জন, ইতালিতে ৩৭ হাজার ১৩০ জন, ফ্রান্সে ২৯ হাজার ১২১ জন।
Discussion about this post