নিউজ ডেস্ক
এবার কক্সবাজারের রামু উপেজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থকর্মীদের জন্য সেফটি বুথ দিয়েছে এসএসসি ৯৫ ব্যাচের সংগঠন ‘প্রজন্ম ৯৫’। স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে সন্দেহজনক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য এ বুথটি দেওয়া হয়।
এর আগে তিন দফায় প্রায় তিনশো পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ ও করোনা সংকট মোকাবিলায় সংগঠনের ১০ সদস্যকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে এ সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুথটি আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসময় রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নোবেল কুমার বড়ুয়া, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুল্লাহ আল কাউসার ও সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, এতোটা ঝুঁকি নিয়ে যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে তাদের নিজেরও সুরক্ষা দরকার। কিন্তু দেশের কথা বিবেচনা করে নিজেকে অরক্ষিত রেখেও তারা কাজ করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রজন্ম ৯৫-এর মহৎ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এভাবেই সব ভালো কাজে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আমি রামুতে যোগদানের পর থেকে দেখছি এলাকায় শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি অনেক মানবিক কাজ বাস্তবায়ন করছে এ সংগঠনটি।
‘আমি বলবো একটি মানবিক সংগঠনের অনন্য দৃষ্টান্ত প্রজন্ম ৯৫। আমি আহ্বান জানাবো, আসুন প্রজন্ম ৯৫-এর মতো আমরা সবাই মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাই।’
সংগঠনের সভাপতি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলম পাভেল বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ করে ল্যাব টেকনেশিয়ানরা নূন্যতম সুরক্ষা ব্যবস্থায় অনেকটা অরক্ষিতভাবে সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আসছিল। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা সেখানে সেফটি বুথ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি এ মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি যাদের সুযোগ আছে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। তাই জাতির এ দুর্যোগে সেই করোনা যোদ্ধাদের সুরক্ষিত রাখতে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আমিন মোরশেদ বলেন, সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রজন্ম ৯৫-এর সদস্যরা কাজ করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধুদের আর্থিক সহযোগিতায় এ সংগঠন তিনশো পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া ৫০ লিটার হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ ও করোনা সংকট মোকাবিলায় সংগঠনের ১০ সদস্যকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় রাখা। তাই ১৯৯৫ সাল থেকে ২৫ বছর পরে বন্ধুত্বে বন্ধন সুদৃঢ় রাখার পাশাপাশি বন্ধুদের অর্থিক সহায়তায় নানা মানবিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে এ সংগঠনটি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রামু ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইজত উল্লাহ বলেন, প্রজন্ম ৯৫-এর প্রতিটি সদস্য স্ব স্ব অবস্থানে এখন আলোকিত মানুষ। তাই তাদের প্রতিটি কাজই সমাজের জন্য ইতিবাচক। যে কারণে বর্তমানে এ সংগঠনটির ওপর মানুষ আস্থাশীল। তারা যা করছে সবই এখন এ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। আমি সংগঠনটি দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
কক্সবাজারের রামুর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করা বন্ধুদের সংগঠন ‘প্রজন্ম ৯৫’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বন্ধুত্ব চর্চ্চার পাশাপাশি নিজেদের পকেটের টাকায় সংগঠনের সদস্যরা বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য সহায়তা, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা দেওয়াসহ ধারাবাহিকভাবে নানা মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এছাড়া রামুর শিক্ষার প্রসারে ২০১৪ সাল থেক সপ্তম শ্রেণির শিক্ষর্থীদের নিয়ে ‘প্রজন্ম ৯৫ বৃত্তি পরীক্ষা’ পরিচালনা করে আসছে।
Discussion about this post