বিশেষ প্রতিবেদক
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে এবার। গত পাঁচ বছরের মধ্যে জিপিএ-৫ এ এবার চমক সবচেয়ে বেশি। আর গেল চার বছরের হিসেব ধরলে পাসের হারেও বেশ সাফল্যের ছাপ। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গতবার এটা ছিল ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ এসেছে এবারের ফলাফলে। এ সংখ্যা ৯ হাজার ৮ জন। গতবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৩৯৩ জন। এবার বেশি জিপিএ-৫ এসেছে ১ হাজার ৬১৫ জনের। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৯৪। ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩৪৪ জন এবং ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৫০২ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ২৪৫ জন ছাত্র। গতবার ছিল ৩ হাজার ৬৫২ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রীদের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৬৩ জন। গতবার ছিল ৩ হাজার ৭৪১ জন। উন্নতি শুধু পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে নয়; উন্নতি হয়েছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায়, মহানগর ও জেলায় এবং তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারে। পাসের হার শতভাগ এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০টির জায়গায় বেড়ে এবার হয়েছে ৫০।
এবারের ফলাফলে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা সবক্ষেত্রে পাসের হার বেড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। বিজ্ঞানে এবার পাসের হার ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ। গতবার ছিল ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মানবিকে এবার পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সার্বিকভাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ফলাফল নিয়ে বেশ স্বস্তিতে। এবার কোনো ক্ষেত্রেই নেই ছন্দপতন। শুধু করোনাই সকলের টেনশন।
শিক্ষাবোর্ডের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠার ২০ বছরের ইতিহাসে ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ। এবারের এসএসসিতে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থী। গতবার ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯২ জন। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল প্রকাশ করা হয়। একইসাথে দেশের অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করে সচিব মোহাম্মদ আবদুল আলীম জানান, এবারের ফলাফল বেশ সন্তোষজনক। এ ধরনের ফলাফল সকলের প্রচেষ্টার ফল।
এবার চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬ জন। এর মধ্যে অংশগ্রহণ করে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮২৩ জন। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭৩ জন। মোট পাস করেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮৮ জন।
ফলাফলে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা তিন বিভাগেই পাসের হার গতবারের চেয়ে বেড়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার হচ্ছে ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ। গতবার ছিল ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মানবিক বিভাগেও পাসের হার বেড়েছে। এ বিভাগে পাসের হার হচ্ছে ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একইভাবে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার হচ্ছে ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩০ হাজার ২৫৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র অংশ নেয় ১৫ হাজার ৭১৭ জন, ছাত্রী ১৪ হাজার ৫৪১ জন। পাস করেছে ২৭ হাজার ৯০৭ জন। ছাত্র ১৪ হাজার ৪৭৬ ও ছাত্রী ১৩ হাজার ৪৩১ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৯২ দশমিক ১০ শতাংশ। ছাত্রীদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫২ হাজার ৩০২ জন। ছাত্র ১৬ হাজার ৮২৯ জন এবং ছাত্রী ৩৫ হাজার ৪৭৩ জন। পাস করেছে ৩৯ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১২ হাজার ৪১৫ জন, ছাত্রী ২৭ হাজার ২৫০ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ছাত্রীদের ৭৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ৬১ হাজার ২৬৩ জন। ছাত্র ৩৩ হাজার ২০৩ জন এবং ছাত্রী ২৮ হাজার ৬০ জন। পাস করেছে ৫৪ হাজার ৩১৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৮ হাজার ৯৪৮ জন, ছাত্রী ২৫ হাজার ৩৬৮ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, ছাত্রীদের ৯০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯ হাজার ৮ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে রয়েছে ৮ হাজার ৯৯ জন, মানবিকে ৬০ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৮৪৯ জন। গতবার ৭ হাজার ৩৯৩ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ছিল ৬ হাজার ৯৫৪ জন, মানবিক থেকে ২৭ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ছিল ৪১২ জন।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৬৫ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৩৪ জন। এই বিভাগে জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১৩ হাজার ২১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ৮১৪ জন, ছাত্রী ৬ হাজার ৩৯৯ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে ৪ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ১৯৯ এবং ছাত্রী ১ হাজার ৯৭৩ জন। জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১ হাজার ৮৭৬ জন। ছাত্র ১ হাজার ৫২ জন এবং ছাত্রী ৮২৪ জন। জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে ৫৪৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৪৬ জন ও ছাত্রী ২০১ জন। এবার জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্য।
মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০ জন। এর মধ্যে ৯ জন ছাত্র এবং ৫১ জন ছাত্রী। জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ৩ হাজার ১৮২ জন। এর মধ্যে ছাত্র হচ্ছে ৫১১ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৭১ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে ৭ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ৯০০ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬৫ জন। ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত পেয়েছে ১৩ হাজার ২৯৮ জন। ছাত্র ৪ হাজার ১২০, ছাত্রী ৯ হাজার ১৭৮ জন। জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে ১৪ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৬২৫ জন, ছাত্রী ৯ হাজার ২২৫ জন। জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পেয়েছে ৫১০ জন। ছাত্র ২৫০ জন, ছাত্রী ২৬০ জন।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪৯। এর মধ্যে ছাত্র ১৭১ জন এবং ছাত্রী ৬৭৮ জন। জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১৩ হাজার ১৩৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৫৬৯ জন এবং ছাত্রী ৭ হাজার ৫৬৭ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে ১৪ হাজার ৬৮৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ হাজার ৭৯৬ জন, ছাত্রী ৬ হাজার ৮৯১ জন। জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১৪ হাজার ১১৭ জন। ছাত্র ৮ হাজার ২০২ জন, ছাত্রী ৫ হাজার ৯১৫ জন। জিপিএ ২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে ১১ হাজার ২১৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ৯৯৪ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ২২৪ জন। জিপিএ ১ থেকে ২ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৩০৯ জন। ছাত্র ২১৬ জন, ছাত্রী ৯৩ জন।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে সবসময় খানিকটা পিছিয়ে থাকা তিন পার্বত্য জেলায় এবার বেশ ভালো ফল হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার এগিয়েছে গতবারের তুলনায় অনেকখানি। এবার কক্সবাজার জেলার পাসের হার হচ্ছে ৮৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রাঙামাটি জেলার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলার পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ফলাফলের বিষয়ে ৪৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রে শতভাগ সফল ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল হক সিকদার জানান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে এবার বেশ ভালো ফল হয়েছে। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে এবার বিজ্ঞানে ৩৮ জন ও মানবিকে ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই শতভাগ সফলতা এসেছে এবারের ফলাফলে।
Discussion about this post