শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজকের শিশুকে আগামী দিনের আদর্শ নাগরিকরুপে গড়ে তুলতে একটি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। সুসমন্বিত ও কল্যাণধর্মী জীবনযাপনে সচেতন, কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ সৎ ও প্রগতিশীল দৃষ্টিসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত ‘চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ’ বন্দর নগরীর বুকে এমনই একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত(EIIN: 132075) রিসার্চ ফর এডুকেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাডেমী ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদগণের পরিচালনায় এই বিদ্যালয়টি ২৩ বছরের পথপরিক্রমায় সচেতন অভিভাবকের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষক ও পাঠক্রম
ট্রাস্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক বাহার উদ্দিন মো. জোবায়ের শিক্ষার মান সম্পর্কে বলেন, শিক্ষা কৌশল নির্ধারণে এখানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আছেন। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষের জন্য প্রথাগত পদ্ধতির উপর ছেড়ে না দিয়ে ক্রমাগত উৎকৃষ্ট পদ্ধতির উপর জোর দিয়ে থাকেন। স্ব স্ব বিষয়ে মাস্টার্স এবং বি.এড, এম. এড ডিগ্রীধারী অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে প্রস্তুত পাঠটিকা অনুসারে পাঠদানের কাজ সম্পন্ন করেন। শিক্ষাবিজ্ঞানের সফল প্রয়োগে বিগত বছর সমূহে সকল বোর্ডপরীক্ষায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের এ+ প্রাপ্তিসহ শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জিত হয়েছে।তাই সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের স্কুলকে পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের অনুমোদন প্রদান করেছেন যা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই। ফলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের নামেই দেবে। সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ এ বিষয়টি লক্ষ্য করবেন যে অনুমোদেন নেই এমন বিদ্যালয়ে ভর্তি করালে বোর্ড পরীক্ষায় নানা জটিলতায় পড়তে হয়।
মানসম্মত ও ডিজিটাল পাঠদান পদ্ধতি
এই প্রসঙ্গে স্কুল অধ্যক্ষ ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যাপক হাবীব রহমত উল্লাহ জানান ,
আমরা শিক্ষার্থীদের শিখনক্রিয়ায় কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করি। প্রথমত:মানবতাবাদী শিখনতত্ত্ব- এক্ষেত্রে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের স্তরে নেমে এসে তাদের বন্ধু হয়ে শ্রেণিশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করেন।দ্বিতীয়ত: Brain Storming বা মাথা খাটানো পদ্ধতি-এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য আলোচনার পর কিছু সমস্যা সমাধান করতে দেবেন, যা তারা বুদ্ধি খাটিয়ে সমাধান করবে।এতে করে ঐ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়।তৃতীয়ত Group Discussion বা দলগত আলোচনা-এতে ৪/৫ জনের একটি দল গঠন করে দেয়া হয় যাতে তারাপাঠ সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করে ধারণা পরিষ্কার করতে পারে।চতুর্থত Pair Teaching বা জোড়া শিক্ষণ- এখানে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাথে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রদের সাথে জুড়ে দেয়াহয়। এতে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থী পিড়া ভালো বুঝতে পারেনি যারা তাদের শিখনে সাহায্য করে। এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আধুনিক পদ্ধতি।এ ছাড়াও রয়েছে Postbox Solving Method, Mind Mapping Method সহ বেশ কিছু অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি।
অন্যদিকে মাল্টিমিডিয়া এবং ওভারহেড প্রজেক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষকে অত্যন্ত সহজবোধ্য ও আনন্দময় করে তোলা হয়েছে।এখানকার শিক্ষকগণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্লে – নার্সারী ক্লাসগুলো ছোট্টমণিদের জন্য সাজানো হয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে।মজার সব সিডির মাধ্যমে বর্ণ মালা ও সংখ্যায় হাতেখড়ি হয় ওদের।এখানে সকল ক্লাসের কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামলূক। একজন অভিজ্ঞ বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার পরিচালনা করছেন এই শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতি বৃহস্পতিবার রয়েছে সাপ্তাহিক পরীক্ষা। ক্লাসের বাহিরেও রয়েছে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর গৃহপরিদর্শন যা ইতোমধ্যে বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। এখানে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক ক্লাসরুম ও সময়সূচী।
সহ–পাঠক্রমিক কার্যাবলী ও স্কাউটিং
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মো: সিকান্দর জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুর সৃজনশীল ক্ষমতার পরিপূর্ণ বিকাশে অত্যন্ত সজাগ চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল।প্রতি বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রণীত বাংলা উচ্চারণের ক্লাস,আবৃত্তি ,বিতর্ক,গানের ক্লাস, চিত্রাঙ্কন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। ইংলিশ লিসেনিং ও স্পিকিং এ পারদর্শীতা অর্জন করার জন্য রয়েছে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব। আউটডোর–ইনডোর গেমসের পাশাপাশি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রতিদিন প্রাত্যহিক সমাবেশে শরীর গঠনমূলক ব্যয়াম করানো হয়।এ ছাড়া স্কুল অধ্যক্ষ বাংলাদেশ স্কাউট, চট্টগ্রাম জেলা রোভার এর সহকারী কমিশনার অধ্যাপক হাবীব রহমত উল্লাহর নেতৃত্বে কাব, বয় ও রোভার স্কাউটিংয়ের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চৌকষ ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।জাতীয় পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পরীক্ষায় এবং ২০১৯ সালের জাতীয় জাম্বুরীতে এই স্কুলের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করার গৌরব অর্জন করেছে ।রাখছে।জাতীয় পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পরীক্ষায় ২০১৯ সালের জাতীয় জাম্বুরীতে এই স্কুলের ৪ জন ছাত্র প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পুরস্কার লাভের গৌরব অর্জন করেছে । ২০২০ সালে আরও ৬ জন শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দুজন স্কাউট মুনতাসির ইসলাম ওয়াছি (১০ম শ্রেণি), শ্রাবণ আহমেদ ইমন(৮ম শ্রেণি)দক্ষিণ কোরিয়াতে ২০২৩ সালের বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষার্থীর মননশীলতা বিকাশের জন্য নিয়মিত দেয়ালিকা ও বুলেটিন প্রকাশ করা হয়।এছাড়া জাতীয় সকল দিবসসমূহ পালিত হয় সাড়ম্বরে।
বিজ্ঞানাগার ও বিজ্ঞান ক্লাব
স্কুল পরিচালনা পরিষদ সভাপতি শিক্ষানুরাগী গোলাম হোসেন বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ছাত্র–ছাত্রীদের যাতে প্রচুর আগ্রহ জন্মায়, বুঝতে সহজ হয় ,ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে,সেজন্য এই্ স্কুলে রয়েছে উন্নত বিজ্ঞানাগার। বিজ্ঞান ক্লাবে নানা সৃজনশীল কর্মকান্ড এবং বিজ্ঞান মেলা,গণিত অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড অয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনস্ক হিসাবে গড়ে তুলতে সফল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আবাসিক ব্যবস্থাপনা
ট্রাস্ট ট্রেজারার অধ্যাপক আহসানুল করিম সিদ্দিকী বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ছাত্রদের শিক্ষা, শৃঙ্খলা ,আচরণে পরিপূর্ণতা প্রদান ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনের নিমিত্তে আবাসিক ছাত্রদের আমরা প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার চর্চার মাধ্যমে দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করে সুশৃঙ্খল অবস্থান নিশ্চিত করেছি।একজন হোস্টেল সুপার ,এক বা একাধিক রেসিডেন্ট টিচার এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাউস টিউটর ও ধর্মীয় শিক্ষকের সমন্বয়ে হোস্টেল পরিচালিত হয়ে থাকে।
করোনাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা
এবিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, করোনাকালে শিক্ষা বিপর্যয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন সচল রাখতে ‘চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ’ অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করেছে ১লা এপ্রিল ২০২০ থেকে।সরকার পরিচালিত সংসদ টিভির পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ ফেসবুক এবং জুম এ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক পাঠদান করেছেন।আমাদের প্রতিটি ক্লাস ছিলো ৪০ মিনিটের।৩৬ জন শ্রেণিশিক্ষক ও বিষয়শিক্ষকের সমন্বয়ে এ যাবৎ করোনাকালীন ২০২০ সালে ১৬ হাজার এবং ২০২১ সালে ১০ হাজার অনলাইন ক্লাসের মাইলফলক অতিক্রমকারী একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ ।
ক্লাস শেষে রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লাস ডাউনলোড করে তা আবার দেখার সুযোগ শিক্ষার্থীদের পাঠ আত্মস্থ করতে ভীষণ সহায়ক হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা মাসিক পরীক্ষা, সাময়িক পরীক্ষাসহ নানা মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে Live Online Examination পদ্ধতিতে যেখানে ৩জন শিক্ষক অনলাইন মনিটরিং করেছেন কঠোরভাবে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এ্যাসাইনমেন্টও সম্পন্ন করেছে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তাই সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে আমাদের এই শিক্ষাসেবা।
পরিশেষে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী এস, এম, নুরুল হক (সি আই পি) বলেন,“শিক্ষার একটি মহৎ উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তিকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও অনন্য মানুষরুপে গড়ে তোলা। অভিভাবকের একটি সিদ্ধান্তই সন্তানের অপরিমেয় সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিকাশের চূড়ান্ত পথনির্দেশ। আমরা আপনার সন্তানকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের পাশাপাশি চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষরুপে গড়ে তোলার জন্য আন্তরিক পরিচর্যা করার কথা দিলাম।”
বিস্তারিত জানতে ১১৬, চট্টেশ্বরী রোড, চকবাজার এবং ৬২৫৪০৩ ,০১৮২০–২৩২০০০ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
Discussion about this post