ধরা যাক আপনার জ্বর হয়েছে, সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশি। একটু একটু শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। আপনি এখন কী করবেন?
সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই চারদিকে নভেল করোনা ভাইরাসের খবর। ফেইসবুকেও একই কথা। তবে কি ওই রোগই হল?
আপনি গেলেন হাসপাতালে। নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখে ডাক্তারও একই সন্দেহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু কীভাবে বোঝা যাবে সত্যিই আপনার মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কি না? সাধারণ বিবেচনা বলে, নিশ্চিত হতে গেলে পরীক্ষা করাতে হবে। কী সেই পরীক্ষা? কীভাবে তা হয়?
লাগবে লালা বা কফ
নতুন করোনা ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে। আর সে কারণেই শ্বাসতন্ত্রের রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হল, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরাও একই নিয়ম অনুসরণ করছেন।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, অন্য অনেক রোগের পরীক্ষায় যেমন রক্ত, মল বা মূত্রের নমুনা প্রয়োজন হয়, করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা সেসব দরকার নেই।
“আমরা সম্ভাব্য রোগীর মুখের লালা বা নাকের শ্লেষ্মা সংগ্রহ করি। সেটা পরীক্ষা করলেই বোঝা যায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি না?”
নমুনা যাবে ল্যাবে
সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা সংরক্ষণ করা হবে স্টেরাইল টিউব বা ভায়ালে। এর মানে হল, ওই টিউব বা ভায়াল আগে থেকেই জীবাণুমুক্ত করা। সব পরীক্ষার ক্ষেত্রেই এ সাধারণ নিয়ম মানা হয়।
এরপর সেই টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, যাতে নমুনা নষ্ট না হয়। নমুনা এমন ল্যাবে পাঠাতে হবে, যেখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে, সেই সঙ্গে আছে টেস্ট কিট। বাংলাদেশে কেবল আইইডিসিআরেই এ পরীক্ষা করা সম্ভব।
আলমগীর বলেন, করোনা ভাইরাস, নিপা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস যে ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে, তার জৈব নিরাপত্তা বা বিএসএল মান থাকতে হয় কমপক্ষে দুই। আইইডিসিআরে বিএসএল-২ এবং বিএসএল-৩ দুই মানের ল্যাবই আছে।
“বাংলাদেশে আরও দুয়েকটি মেডিকেল কলেজে এ ধরনের ল্যাব আছে। তবে সেখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। কারণ ল্যাব থাকলেও হয়ত রোগতত্ত্ববিদ নেই, র্যাপিড রেসপন্স টিম নেই।”
পরীক্ষার নাম আরটি–পিসিআর টেস্ট
ল্যাবে নমুনা পৌঁছানোর পর হবে পরীক্ষার ব্যবস্থা। এ পরীক্ষার নাম আরটি-পিসিআর বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন। আর নমুনায় করোনা ভাইরাস আছে কি না তা বুঝতে ব্যবহার করতে হবে বিশেষ রি-এজেন্ট।
সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নভেল করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের একটি কিট তৈরি করেছে। সেই কিট ব্যবহার করে রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।
আলমগীর জানান, আইইডিসিআর এ পরীক্ষায় ব্যবহার করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া একটি কিট, যাকে তারা বলেন পিসিআর প্রাইমারি প্রোব রি-এজেন্ট।
প্রতিটি প্রাণীর ডিএনএ বৈশিষ্ট্য যেমন আলাদা, তেমনি প্রতিটি ভাইরাসের জিন বিন্যাসও হয় আলাদা ধরনের। একে বলে ভাইরাল জিনোম। রোগীর নমুনায় করোনা ভাইরাসের জিনোম বৈশিষ্ট্যের কোনো জেনেটিক বিন্যাস পাওয়া যায় কি না- সেটাই আরটি-পিসিআর পরীক্ষার লক্ষ্য।
নভেল করোনা ভাইরাস যেহেতু আরএনএ ভাইরাস, সেহেতু পরীক্ষার জন্য প্রথমে রোগীর নমুনা থেকে সব ধরনের আরএনএ আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর তার সঙ্গে মেশানো হয়রি-এজেন্ট এবং সত্যিকারের করোনা ভাইরাস থেকে পাওয়া জিনের উপাদান। পরে সেই মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয় নির্দিষ্ট যন্ত্রে।
রোগীর নমুনায় যদি করোনা ভাইরাস থেকে থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। আইইডিসিআর তখন সেই নমুনা পাঠাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
সময় লাগবে অন্তত তিন ঘণ্টা
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলছেন, তারা যেভাবে এ পরীক্ষা করেন, তাতে ফলাফল পেতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে।
“নমুনা আনার পর অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা যায়। আরএন এক্সট্রাকশন করতে হয়। সেখান থেকে পিসিআর মেশিনে দিয়ে সেটা রান করাতে হয়। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষাটি শেষ করতে আমাদের তিন ঘণ্টা সময় লাগে।”
তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে নমুনা হাতে পাওয়ার ওপর। আরটি-পিসিআরের প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকার বেশি। আপাতত এ ব্যয় সরকারই বহন করছে।
যথেষ্ট কিট আছে তো?
আলমগীর জানান, বর্তমানে আইইডিসিআরে প্রায় দেড় হাজার কিট মজুদ আছে। আরও কিছু কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলো আসার পথে রয়েছে।
রোগটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে এই কিট দিয়ে সবার পরীক্ষা করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে সবার ক্ষেত্রে পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে না।
“সারাদেশে আমাদের সার্ভেইলেন্স আছে। এখানে করোনা ভাইরাস পজেটিভ কোনো পেশেন্ট পেলে আমরা সারা দেশে সব হাসপাতালে বলব সর্দি বা শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীর নমুনা পাঠাতে।
“নমুনা পাঠানোর পর সেগুলো পরীক্ষা করে যদি করোনা ভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়, তাহলে বোঝা যাবে এ রোগ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটাকে বলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন।
“তখন আর সবাইকে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। হাসপাতালগুলোতে বলে দেয়া হবে এ ধরনের লক্ষণ নিয়ে এলে তাকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ধরে নিয়ে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।”
এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারই অনুসৃত নীতি।
চিকিৎসা কীভাবে হয়?
সর্দি-জ্বরের যেমন বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই, করোনা ভাইরাসেরও তেমন বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই।
কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি না হওয়ায় আপাতত নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হল, যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
বিবিসি লিখেছে, পরীক্ষায় কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হলে তার মধ্যে যে উপসর্গগুলো আছে, সেগুলো সারাতেই মূলত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর রোগীর স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে চেষ্টা চালাতে থাকে।
কিন্তু কারও মধ্যে নিউমোনিয়ার মতো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে প্রয়োজনে অক্সিজেন দেয়া যেতে পারে। জটিলতা বেড়ে গেলে ভেন্টিলেটশনে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র) রাখা যেতে পারে। এরকম রোগীদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের অবস্থা এরকম সঙ্কটাপন্ন হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩ শতাংশের মতো।
নিজেই পরীক্ষা করুন আপনি করোনা আক্রান্ত কি না!
দেশে করোনা রোগীর সন্ধানের খবরে ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে জন সাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এখন সবার প্রশ্ন হল একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা কীভাবে নির্ণয় করা যাবে? আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা নিজেই পরীক্ষা করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত একটি লেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন। এছাড়া লেখাটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।
ফেসবুকের ওই পোস্টে বলা হয়েছে, ‘সাধারণত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বর বা কাশি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার ফুসফুসের ৫০% ফাইব্রোসিস (সূক্ষ্ম অংশুসমূহের বৃদ্ধি) তৈরি হয়ে যায়, যার মানে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তাইওয়ানের বিশেষজ্ঞরা কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, সেটা নিজে নিজেই পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যেটা কেউ প্রতিদিন সকালে উঠেই কয়েক সেকেন্ডে একবার পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হতে পারেন। পরীক্ষাটা হলো;
পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সেটাকে দশ সেকেন্ডের কিছুটা বেশি সময় ধরে আটকে রাখুন। যদি এই দম ধরে রাখার সময়ে আপনার কোনো কাশি না আসে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব না হয়, মানে কোনো প্রকার অস্বস্তি না লাগে, তার মানে আপনার ফুসফুসে কোনো ফাইব্রোসিস তৈরি হয়নি অর্থাৎ কোনো ইনফেকশন হয়নি, আপনি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত আছেন।
জাপানের ডাক্তাররা আরেকটি অত্যন্ত ভালো উপদেশ দিয়েছেন যে, সবাই চেষ্টা করবেন যেন আপনার গলা ও মুখের ভেতরটা কখনো শুকনো না হয়ে যায়, ভেজা ভেজা থাকে। তাই প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর একচুমুক হলেও পানি পান করুন।
কারণ, কোনোভাবে ভাইরাসটি আপনার মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলেও সেটি পানির সাথে পাকস্থলীতে চলে যাবে, আর পাকস্থলীর এসিড মুহূর্তেই সেই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে।’
পাঁচ দিনেই প্রকাশ পাচ্ছে করোনার লক্ষণ
যখন আমরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে দেখতে পাই, আমরা বোঝার চেষ্টা করি লক্ষণগুলো কতটা মারাত্মক। তবে এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ পাঁচ দিনেই প্রকাশ পাচ্ছে বলে জানা গেছে এক নতুন গবেশণায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে ১২ দিনের মতো।
সোমবার (৯ মার্চ) অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ করোনা রোগীর শরীরে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে। তবে গড়ে এ সময়সীমা ছিল মাত্র পাঁচদিন। অর্থাৎ ভাইরাস সংক্রমণের পাঁচদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ রোগীর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে।
গবেষকরা জানান, মৌসুমী ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে এক থেকে চারদিন। করোনার মতো এতেও সর্দি, কাশি, জ্বর, গলায় খুসখুস প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে দুটোরই একই উপসর্গ থাকায় প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ধারণে ভুল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ মৌসুমী ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কিছুদিনের মধ্যেই চিকিৎসকরা জানিয়ে ছিলেন, কারও শরীরে করোনা সংক্রমণের সন্দেহ থাকলে তাকে দুই সপ্তাহ আলাদা রাখা উচিত। কারণ শরীরে করোনা ভাইরাস থাকলে এ সময়ের মধ্যেই তার লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের বিজ্ঞানীরা চীনের উহানে করোনা সংক্রমণ শুরুর পরপরই বাইরের অন্তত ৫০টি এলাকার মানুষদের স্বাস্থ্য প্রতিবেদন নিয়ে গবেষণা চালান।
একেবারে প্রারম্ভিক পর্যায়ে হওয়ায় তখনও ওইসব অঞ্চলে সম্প্রদায়ভিত্তিক সংক্রমণের সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ সেখানে করোনার একমাত্র প্রবেশের উপায় ছিল বহিরাগতদের আগমনের মাধ্যমে। গবেষণায়, ১৮১ জনের শরীরেই পাঁচ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে।
করোনা রোগীদের নিয়ে গা শিউরে ওঠা তথ্য দিল সিঙ্গাপুর
করোনাভাইরাসেক আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য দিল সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকটিয়াস ডিজিস (এনসিআইডি) এবং ডিএসও ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ। প্রতিষ্ঠান দুইটি এক গবেষণায় দেখেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা চারপাশকে ব্যাপকভাবে দূষিত করে।চলতি বছরের ৪ মার্চ অ্যামেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে সেই গবেষণার ফল প্রকাশ হয়।
জানা গেছে, ওই গবেষণার জন্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগীর ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা ২৪ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোয়ারেনটাইনে ছিলেন। ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইনে থাকা অবস্থায় পাঁচদিন তাদের বসবাসের ঘরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরিষ্কার করার পর দু’জনের ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এদিকে তৃতীয়জনের ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় নিয়মিত পরিষ্কারের আগে।
দেখা গেছে, পরিষ্কার না করা ঘরটিতে দূষণের মাত্রা বেশি ছিল। পরিষ্কার করার আগে তৃতীয় রোগীর ঘরের ১৫টি স্থানের মধ্যে ১৩ জায়গায় করোনাভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, তার ব্যবহারের চেয়ার, বিছানা, জানালা, মেঝে, লাইটের স্যুইচ, টেবিল, গ্লাস এবং লকারে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। তৃতীয়জনের ব্যবহারের টয়লেটে পাঁচ জায়গার মধ্যে তিন জায়গায় করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলছেন, অন্য দু’জনের ঘরে পরিষ্কারের পর করোনার জীবাণু পাওয়া যায়নি। দিনে অন্তত দু’বার তাদেরে ঘর জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছিল।
করোনার পরীক্ষা কোথায়, কীভাবে হয় এবং খরচ কত?
দুনিয়াজোড়া সর্দি-কাশির ১০-৩০ শতাংশ হয় করোনা ভাইরাস দিয়ে। ২০০৩ সালের সার্স করোনা, পরবর্তীকালের মিডল ইস্টের মারস করোনার মতোই আরেক করোনা এবারের উহানের (চীন) নভেল করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অসুখটির নাম দিয়েছে কোভিড-১৯। এতদিন বাংলাদেশে কারো করোনা সংক্র’মনের সংবাদ পাওয়া না গেলেও আজ আইইডিসিআর এর প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
করোনার জীবন বৈচিত্র্য: করোনা মূলত প্রাণীদের রোগ। সার্স করোনা ছিল কুকুরের, মার্স করোনা উটের আর নভেল করোনা বাদুড়ের রোগ। ড্রপলেটে জীবাণু ১০ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে (ফ্লু মাত্র ৪৮ ঘণ্টা)।
কারও হলে রোগী থেকে ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে। ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) বাঁচে না করোনা ভাইরাস। ব্লিচিং বা দৈনন্দিন ব্যবহারের ডিসইনফ্যাক্টান্ট করোনা ভাইরাস নি’র্মূল করতে পারে।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমউদ্দিন জানান, ড্রপলেট ইনফেকশন অর্থাৎ হাঁচি-কাশি দিয়ে ছড়ায় এ রোগ। হাঁচি-কাশি কোথাও লাগলে সেখান থেকে (ফোমাইট) ছড়ায়।
মলমূত্র বা অন্য কোনো দৈহিক রসে ছড়াতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আক্রা’ন্ত, সন্দেহজনক আক্রা’ন্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা পর্যন্ত বিপদ নেই। অবারিত যোগাযোগ ও যাতায়াতের আজকের দুনিয়ায় সংক্রা’মক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশ’ঙ্কা অনেক।
ল্যাবটেস্ট: নিশ্চিত করার জন্য আরটিপিসিআর ভরসা। মুখের লালা, নাকের শ্লেষ্মা ও রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা যায়।
নতুন করোনা ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে। আর সে কারণেই শ্বাসতন্ত্রের রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হল, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা সংরক্ষণ করা হবে স্টেরাইল টিউব বা ভায়ালে। এরপর সেই টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, যাতে নমুনা ন’ষ্ট না হয়।
নমুনা এমন ল্যাবে পাঠাতে হবে, যেখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে, সেই সঙ্গে আছে টেস্ট কিট। বাংলাদেশে কেবল আইইডিসিআরেই এ পরীক্ষা করা সম্ভব।
করোনা ভাইরাস, নিপা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস যে ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে, তার জৈব নিরাপত্তা বা বিএসএল মান থাকতে হয় কমপক্ষে ২। আইইডিসিআরে বিএসএল-২ এবং বিএসএল-৩ দুই মানের ল্যাবই আছে।
ল্যাবে নমুনা পৌঁছানোর পর হবে পরীক্ষার ব্যবস্থা। এ পরীক্ষার নাম আরটি-পিসিআর বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন। আর নমুনায় করোনা ভাইরাস আছে কি না তা বুঝতে ব্যবহার করতে হবে বিশেষ রি-এজেন্ট।
সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নভেল করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের একটি কিট তৈরি করেছে। সেই কিট ব্যবহার করে রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।
নভেল করোনা ভাইরাস যেহেতু জঘঅ (রাইবো নিউক্লিয়িক এসিড) ভাইরাস, সেহেতু পরীক্ষার জন্য প্রথমে রোগীর নমুনা থেকে সব ধরনের আরএনএ আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর তার সঙ্গে মেশানো হয় রি-এজেন্ট এবং সত্যিকারের করোনা ভাইরাস থেকে পাওয়া জিনের উপাদান। পরে সেই মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয় নির্দিষ্ট যন্ত্রে।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, রোগীর নমুনায় যদি করোনা ভাইরাস থেকে থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। আইইডিসিআর তখন সেই নমুনা পাঠাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।এ পরীক্ষার ফলাফল পেতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে।
নমুনা আনার পর অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা যায়। আরএন এক্সট্রাকশন করতে হয়। সেখান থেকে পিসিআর মেশিনে দিয়ে সেটা রান করাতে হয়। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষাটি শেষ করতে আমাদের ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।
তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে নমুনা হাতে পাওয়ার ওপর। আরটি-পিসিআরের প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ হচ্ছে ৫ হাজার টাকার বেশি। আপাতত এ ব্যয় সরকারই বহন করছে।
তবে বর্তমানে আইইডিসিআরে প্রায় দেড় হাজার কিট মজুদ আছে। আরও কিছু কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলো আসার পথে রয়েছে।
অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমউদ্দিন জানান, আগে পরীক্ষার ফলাফল জানতে ৩-৪ দিন লাগলেও এখন ২-৩ ঘণ্টায় পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে। রক্তের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে অন্য রোগ থেকে পৃথক করার জন্য। অন্য অসুখ থাকলে জটিলতা সন্দেহ করলে তাও পরীক্ষা করা দরকার হবে।
প্রতিকার: এখন পর্যন্ত চিকিৎসার প্রবর্তিত প্রটোকল নেই। অসুস্থ হয়ে পড়লে উপসর্গ অনুযায়ী প্র’তিকার করতে হবে। জটিলতার চিকিৎসা করতে হবে। প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন কাজে লাগবে নিউমোনিয়া না হওয়া পর্যন্ত। পানি পান করতে হবে যথেষ্ট, খাদ্য খাওয়া ঠিক রাখতে হবে।
ভাইরাস রোগ-ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রা’দুর্ভাবের সময়কালীন নিরাপদ থাকতে পারলেই হল। হাঁচি-কাশি (ড্রপলেট ইনফেকশন) দিয়েই মূলত ছড়ায় কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া। কারও হলে রোগী থেকে ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে, নিজের হলে স্কুল-অফিস বাদ দিতে পারলে ভালো, বাজার-ঘাটে না গেলেই হয়। রেলিং, দরজা, গেট বা সন্দেহজনক কিছুর সংস্পর্শে এলে হাত পরিষ্কার করতে হবে, সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সব সময় ধারে-কাছে সাবান-পানি নাও থাকতে পারে। অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে নিজেকে, প্রতিষ্ঠানকে। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে বা করাটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। ধারণা করা হয় নাক-মুখের সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে।
বারবার হাত-আঙুল চোখ, নাক-মুখে লাগানোর বদ অভ্যাস বদলাতে হবে। আক্রা’ন্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা যাবে না; আসতে হলে মাস্ক পরতে হবে। ডিসপোজেবল মাস্ক একবার পরে ফেলে দিতে হবে। অন্য দেশে ভ্রমণে গেলে সতর্কতা অত্যাবশ্যকীয়।
এ ছাড়া জ্বর, কাশি থাকলে সম্ভব হলে ভ্রমণ বাতিল করা যেতে পারে। ভ্রমণে থাকলে এ উপসর্গের সঙ্গে শ্বাসক’ষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, করোনা ছড়িয়েছে, এমন দেশ বা এলাকায় সম্প্রতি সফর করে থাকলে চিকিৎসককে সেই তথ্য দিতে হবে।
দেশে যেসব হাসপাতালে মিলবে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা
দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলো সোমবার (৯ মার্চ) থেকে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য মজুদ রাখা হয়েছে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও রোগ প্রতিরোধী পোশাক।
রাজধানীর হাসপাতালগুলো হলো- মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বুড়িগঙ্গার তীরে নির্মানাধীন হাসপাতাল ও কেরানীগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের হটলাইন ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০৯১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫ নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার বেলা সোয়া ১২ টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, দেশে নতুন করে কোনো করোনো ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এরআগে রোববার (৮ মার্চ) বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। এছাড়া পর্যবেক্ষণে রয়েছেন দুইজন।
তাদের মধ্যে দুইজন ইতালি থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন। দেশে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত একজনের মাধ্যমে পরবর্তীতে একই পরিবারের আরও এক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। ‘তিনজনের মধ্যে একজন নারী, দুইজন পুরুষ। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
গত বছরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। যাতে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। প্রায় প্রতিদিনই ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানে যেমন নতুন রোগী বাড়ছে, তেমনি নতুন দেশ থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য জানানো হচ্ছে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী ভাইরাসটি এরইমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০৯টি দেশে ছড়িয়েছে। এসব দেশ থেকে নতুন রোগীর তথ্য জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি যোগ হচ্ছে নতুন দেশের নাম।
কীভাবে ঘরেই কোয়ারেন্টাইন তৈরি করবেন
শুধু হাসপাতালেই নয় ঘরের মধ্যেও কোয়ারেন্টাইন হচ্ছেন করোনাভাইরাসে ঝুঁকিতে থাকা মানুষ। একে বলা হচ্ছে সেলফ কোয়ারেন্টাইন। সংক্রমণ রোধে নিজেকে নিজেই আটকে রাখা। অনলাইনের মাধ্যমেই সারা হবে জরুরি কর্মকাণ্ড। যেমন এর মধ্যে গুগল, ফেসবুক তাদের কর্মীদের ঘরে বসে অফিস করার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে। আবার টুইটার সব কর্মীকে নির্দেশ দিয়েছে ঘরে বসেই অফিসের কাজ সারতে। ইতোমধ্যে পুরো ইতালিকে কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যেক বাসিন্দা ঘরের মধ্যে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। চীনের পর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে দেশটিতে।
কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং সোশ্যাল ডিসটেনস:
কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং সোশ্যাল ডিসটেনস- এ তিনভাবে সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রেখে সংক্রমণ রোধ করা যায়। মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রটোকল এই তিন পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছে এভাবে:
সোশ্যাল ডিসটেনস: মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সীমিত করে ফেলা। সামাজিকভাবে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়া। আড্ডা, বৈঠক, অনুষ্ঠান, সমাবেশে অংশগ্রহণ না করে। মূলত যেখানে ভিড় হয় এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থান থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
কোয়ারেন্টাইন: কোনো ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের আগে কিংবা উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগে নিজেকে আবদ্ধ স্থানে আটকে ফেলা। যার মানে তাকে মানুষ থেকে আলাদা করে ফেলা হবে। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই কাজটা করলেও এখন নিজে নিজেকে কোয়ারেন্টাইনের ঘটনা বাড়ছে। মূলত আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসলে ওই ব্যক্তি এমন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। নিজের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কী না, সেটি পর্যবেক্ষণ করা। যারা পূর্ববর্তী অন্যান্য গুরুতর রোগের কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারাও কোয়ারেন্টাইনে থাকবে।
আইসোলেশন: আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতাল নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা। যারা এখনো সুস্থ এবং ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।
কীভাবে কোয়ারেন্টাইনের প্রস্তুতি নেবেন?
টয়লেট টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পানির বোতল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ছাড়াও কোয়ারেন্টাইন প্রস্তুত করার জন্য আরো বেশি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও), সিডিসিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেগুলো তুলে ধরা হলো: শুরুতে ফ্লু থেকে নিয়ে সতর্কতা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। এক্ষেত্রে সাধারণ বা নিয়মিত ফ্লু থেকে মুক্ত যে কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শক্তিশালী। তবে ফ্লু হলেই সতর্ক থাকতে হবে। ফ্লু সম্পর্কে সচেতন থাকলে করোনা আতঙ্কে ভুগবে না মানুষ। এতে সাধারণ সর্দি কাশির জন্য হাসপাতালে ভিড় করবে না। শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও ফ্লু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ফ্লু যাতে দ্রুত সেরে যায় সে চেষ্টা করতে হবে, তাহলে করোনাভাইরাস আপনাকে আক্রমণ করছে না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। যেসব পণ্য-দ্রব্য সংরক্ষণে রাখবেন: কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য টয়লেট পেপার এবং খাবার সংরক্ষণে বেশি জরুরি। তবে যেখানে পানির কোনো সংকট নেই, সেখানে টয়লেট পেপার সংরক্ষণে রাখা খুব একটি জরুরি না। তবে মানুষের সংস্পর্শ থেকে আপনাকে দূরে থাকতে হবে, সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহে রাখতে হবে আপনাকে।
* অন্তত ৩০ দিনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, পেইন কিলার, ঠাণ্ডাজনিত অসুখের জন্য ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে।
* হাত পরিষ্কার করার জন্য সাধারণ সাবান ও টিস্যু নিতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুব একটু জরুরি নয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন, বাচ্চাদের জন্য ডায়াপার, স্কিনকেয়ার, কন্ডিশনার এগুলোও রাখতে হবে।
* খাবারের মধ্যে চাল, ডাল, ক্যানড ফিশ, তেল, লবণ, মসলা নিতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন মাংস, ডিম, সবজি, ফলফলাদি। তবে মাছ বেশি দিন রাখলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
* এ ছাড়া চা, কফি পানীয়, বিস্কুট, বাদামজাতীয় খাবার রাখতে পারেন।
যেভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন
* খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। নিয়মিত পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সে বা অনলাইনে কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
* গৃহস্থালি কাজ কমিয়ে দিতে হবে। যদিও বিষয়টি মেনে চলা একটি কঠিন। এরপরেও দোকানে, লন্ড্রিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। থালা-বাসন পরিষ্কার করাসহ অন্যান্য কাজ কমিয়ে দিতে হবে। রুটিন কাজ সীমিত করতে হবে। তবে শোয়ার আগে বিছানা পরিষ্কার করতে হবে অবশ্যই।
* কোয়ারেন্টাইনে থাকলেই যে আপনি একেবারে ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, তেমন কিন্তু নয়। পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে আপনার দেখা করা প্রয়োজন হতে পারে, জরুরি যে কোনো কাজেই আপনি বের হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে খুব সীমিত আকারে। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়া এবং মুখে মাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলতে হবে। তবে এটি এও মনে রাখতে হবে যে, সুস্থ মানুষের জন্য মাস্ক ব্যবহার জরুরি নয়।
সূত্র: সিএনইটি
করোনা: ধুমপায়ীদের জন্য দুঃসংবাদ
করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হলো হালকা জ্বর, সর্দি ও কাশি। তবে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে বসলে ঝুঁকি রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধরে রাখতে ধূমপান ছেড়ে দেয়া উচিত। খবর- ডেইলি মেইল
গবেষণায় দেখা গেছে, অতীতের সার্স ও চলমান করোনা ভাইরাসের মতো মহামারিতে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন বয়স্করা। তবে এর সঠিক কারণ এখনও জানতে পারেননি গবেষকরা।
- তবে গবেষকরা এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মনে করছেন, ধূমপান ও দূষণের কারণে এদের তরতাজা ফুসফুস এখনও সক্ষমতা হারায়নি। এবং এই বয়সে তাদের ডায়াবেটিস ও ক্রোনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিসেসের (সিওপিডি) মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
- অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস’স কিরবি ইনস্টিটিউটের বায়োসিকিউরিটি বিভাগের প্রধান রেইনা মকন্টায়ার। এই অধ্যাপক বলেছেন, ‘যাদের ফুসফুসজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ভাইরাস খুবই নির্দয়।’ শুধু ধূমপান নয়, যেসব দমকল কর্মী দীর্ঘদিন ধরে নাবানল নেভানোর কাজ করছেন (বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া), তাদের জন্যও দুঃসংবাদ দিচ্ছে এই ভাইরাস।
- অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস’স কিরবি ইনস্টিটিউটের বায়োসিকিউরিটি বিভাগের প্রধান রেইনা মকন্টায়ার। তিনি বলেন, ‘যাদের ফুসফুসজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এ ভাইরাস খুবই নির্দয়।’
- শুধু ধূমপান নয়, যেসব দমকল কর্মী দীর্ঘদিন ধরে দাবানল নেভানোর কাজ করছেন (বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া), তাদের জন্যও দুঃসংবাদ দিচ্ছে এ ভাইরাস।
- সম্প্রতি ব্যাপক দাবানলের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া দাবানলে কয়েক মাস জ্বলেছে দেশটি। এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছে, মারা গেছে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণী। দাবানলের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, পুড়ে ছাই হয়েছে লাখ লাখ একর জমির গাছপালা।
- করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৮২৮। বিশ্বের ১০৯টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৩৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১১৯ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের।
- চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। দেশটিতে এক দিনেই ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ জনে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৭৫ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইতালি সরকার। অন্যদিকে ইরানে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৬৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৯৪ জন।
Discussion about this post