বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চট্টগ্রাম: করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় প্রস্তুত হচ্ছে এক লাখ পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই)।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয় চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডকে এসব পিপিই তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে।
স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি এমন পিপিই বানাতে অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেলেই তৈরিকৃত ৫০ হাজার পিপিই’র প্রথম চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব পিপিই চিকিৎসক, নার্সরা ব্যবহার করবেন বলে জানা যায়।
গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারের কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিপিই তৈরির নির্দেশনা দিয়েছি। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সহিত পিপিই তৈরি করা হচ্ছে। সরকারও এই পিপিই তৈরিতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই সরকার পিপিই তৈরির জন্য পছন্দ করেছেন। পিপিই তৈরির মধ্যদিয়ে আমরাও করোনা মোকাবেলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক লাখ পিপিই বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন প্রস্তাবটি আমরা গ্রহণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পিপিই তৈরির কাজ শুরু করি। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ৫০ হাজার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের কাজ করতে অভিজ্ঞ। আমাদের তৈরি পিপিই আমেরিকায় রপ্তানি হয়। পিপিই তৈরির বিশেষায়িত মেশিন ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা এসব পিপিই তৈরি করা হয়। একটি বিশেষায়িত ফ্লোরের ১৩টি লাইনে ৭৩০ শ্রমিক পিপিই তৈরির কাজ করছে।
‘নায়াগ্রা জলপ্রপাতে আমাদের কারখানার পিপিই আগেই রপ্তানি হতো। আমেরিকার একটি বায়ার আমাদের পিপিই সংগ্রহে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে। এ বুকিং বাতিল করে সরকারের আগ্রহ ও সঙ্কটকালীন সময় বিবেচনায় নিয়ে পিপিই প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) বিপ্লব কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের একদিনেই ৫০ হাজার পিপিই পাঠিয়ে দিয়েছি। আরো ৫০ হাজার পিপিই প্রস্তুত হচ্ছে। আরো অর্ডারের প্রস্তাবনা পেয়েছি। সেগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে। পিপিই তৈরির জন্য কারখানায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কারখানার নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কাজের তদারকিতে থাকা ফ্যাক্টরির কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত কাপড় থাকায় সরকারের অর্ডার পাওয়া মাত্র কাজ শুরু করতে পেরেছি। এলসি করে কিংবা বিমানে এ কাপড় আনতে গেলে অনেকদিন সময় লাগতো। এখন শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় দ্রুত সময়ে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে।
কারখানা সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পৃথকভাবে এক লাখ পিপিই তৈরির দুটি কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
গত ২৪ মার্চ এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন। একদিনেই ৫০ হাজার পিপিই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যেই বাকি পিপিই তৈরির কাজ সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন কারখানা সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের চতুর্থ তলার একটি ফ্লোরে পিপিই তৈরির কাজ করছে শ্রমিকরা। কাজের দেখভাল করছেন ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় শ্রমিকরা এসব পিপিই তৈরিতে কাজ করছে।
১৩টি লাইনের আল্ট্রাসনিক মেশিনে পিপিইগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কোনোরূপ সেলাই ছাড়াই তিনটি রঙের পিপিই তৈরি হচ্ছে। এ পিপিইগুলোতে পানি ঢুকবে না বাতাস প্রবেশ করবে না।
কারখানাটিতে এখন পিপিই তৈরিতেই ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা। আর করোনা প্রতিরোধে সরকারের পাশে দাঁড়াতে প্রানান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কারখানাটির কর্তা ব্যক্তিরা।
Discussion about this post