টানা তিনমাসের প্রাণপণ লড়াইয়ে করোনাভাইরাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এনেছে চীন। গত কয়েকদিন দেশটিতে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। তবে বিদেশফেরত নাগরিকদের মাধ্যমে দেশটিতে আরেক দফা মহামারির মুখোমুখি চীন। চীনে নতুন করে খবর এসেছে, দেশটিতে ‘হান্তাভাইরাস’ নামে নতুন এক ধরণের ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হান্তাভাইরাসের নাম শুনে নতুন আতঙ্কে মানুষ। এরই মধ্যে চীনে নতুন এই ভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়ানো হান্তাভাইরাস নিয়ে নেটিজেনরা আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকের বিশ্বাস, করোনার মতো এই ভাইরাসও চীন থেকে উদ্ভব। বর্তমানে টুইটারের অন্যতম শীর্ষ ট্রেন্ড হিসেবে চলছে হান্তাভাইরাস। করোনা ভাইরাসের সঙ্গে এখনও মানুষের যুদ্ধ থামেনি, এর মধ্যে হান্তাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে কি-না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে অনেকে। এটা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। অনেকে মনে করছে, এটা চীনের আরেক ভাইরাস, যা নতুন করে মহামারি তৈরি করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস। এতে বিশ্বজুড়ে প্রাণ গেছে ১৭ হাজার ২২৯ জনের। মোট আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫০২। সুস্থ হয়ে ফিরেছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৯ জন। এর মধ্যে ‘হান্তাভাইরাস’ নামে নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণ চিন্তায় ফেলেছে বিশ্ববাসীকে।
হান্তাভাইরাস কী?
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ
নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা
সেন্টার ফর
ডিজিজ
কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)
বলছে,
হান্তাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রোম (এইচপিএস) মানুষের শ্বাসযন্ত্রে তীব্র,
কখনও
কখনও
মারাত্মক সমস্যা
তৈরি
করতে
পারে।
তবে
এটা
করোনাভাইরাসের মতো
বায়ুবাহিত রোগ
নয়।
এই
ভাইরাস
ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়াতে
পারে,
যদিও
এটা
তাদের
মধ্যে
ছড়ায়
না।
ইঁদুরের মূত্র,
লালা
বা
মলের
সাহায্যে মানুষ
হান্তাভাইরাসে আক্রান্ত হতে
পারে।
সিডিসি
বলছে,
এর
কোনো
প্রমাণ
নেই
যে,
করোনাভাইরাসের মতো
মানুষ
থেকে
মানুষে
হান্তাভাইরাস ছড়াবে।
তবে
কেউ
যদি
ইঁদুরের মূত্র
বা
বাসা
বাঁধার
উপকরণ
ছুঁয়ে
আসার
পর
চোখ,
নাক
বা
মুখ
স্পর্শ
করে
তাহলে
এ
ভাইরাসের সংক্রমণ হতে
পারে।
হান্তাভাইরাসের লক্ষণ
হান্তাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার
প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে
রয়েছে-
ক্লান্তি, জ্বর
ও
পেশীতে
ব্যথা
অনুভব
করা।
বিশেষ
করে
উরু,
পিঠ
ও
কাঁধের
মতো
বড়
পেশীতে
ব্যথা
অনুভূত
হয়।
এছাড়া
আক্রান্ত ব্যক্তির মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ঠান্ডা
এবং
পেটের
সমস্যা
যেমন-
বমি
ও
ডায়রিয়া হতে
পারে।
হান্তানাভাইরাসে রোগীর
সবশেষ
লক্ষণ
হচ্ছে,
এতে
আক্রান্ত হলে
তীব্র
শ্বাসকষ্ট হয়।
হান্তাভাইরাসের উৎপত্তি
অনেকের
ধারণা
হান্তাভাইরাসের উৎপত্তি চীনে।
কিন্তু
না,
এর
উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৩
সালে
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি অঞ্চলে হান্তাভাইরাসের উৎপত্তি। অঞ্চলটি আরিজোনা, নিউ
মেক্সিকো, কলারোডা ও
উতাহকে
ভাগ
করেছে,
যা
ফোর
কর্নারস নামে
পরিচিত। ওই
অঞ্চলের এক
যুবক
একদিন
শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ
সময়
নিউ
মেক্সিকোর হাসপাতালে নেয়ার
পর
তার
মৃত্যু
হয়।
ওই
যুবকের
স্বাস্থ্য প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে
চিকিৎসকরা জানতে
পারেন,
কয়েক
দিন
আগে
একই
লক্ষণ
দেখা
দেয়ার
পর
তার
বাগদত্তার মৃত্যু
হয়েছে।
সিডিসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, পানামা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে হান্তাভাইরাস আক্রান্ত রোগীও চিহ্নিত করা হয়েছে। হান্তাভাইরাস সম্পর্কিত কোনো খবরে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এটা নতুুন কোনো ভাইরাস নয়। এ ভাইরাস আগে থেকেই আছে। করোনাভাইরাসের মতো বিস্তার রোধে হান্তাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সবাইকে বাসায় থাকতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
Discussion about this post