২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ঢাকা ছাড়া সারাদেশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। আজ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ৪৯তম জাতীয় দিবস। বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির মন্ত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দিন আজ। বেদনাকে প্রতিজ্ঞায় পরিণত করে যুদ্ধের শপথ নেওয়ার দিন আজ। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, লাখ লাখ মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীনতা বাঙালি জাতির মহত্তম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। লালন করতে হবে স্বাধীনতার সত্যিকার চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।
যদিও নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ স্বাধীনতা দিবসের সব কার্যক্রম বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পুরো রাজধানী সেজেছে লাল-সবুজ আলোকসজ্জায়। সরকারি ভবন, পথ-ঘাটের সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সাজিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় পতাকা ও উজ্জ্বল আলোয়। সারাদেশের মানুষ দিনটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয় পেলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা শুরু করে। তাদের এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘোষণা হ্যান্ডবিল, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে এ দেশের মানুষ দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে।
Discussion about this post