এম. সারওয়ার
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র জাওয়াদ। করোনর কারণে স্কুল ছুটি, তাও আবার ১৪ দিন! বেশ খুশীর সংবাদ ছিল সেটি! কিন্তু বাইরে বেড়ানো বন্ধ, থেলা বন্ধ!সারাদিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে অল্প ক’দিনেই হাঁপিয়ে উঠেছে সে।পড়ার টেবিলেও মন বসছেনা। তার উপর করোনা ভাইরাস নিয়ে শুধু মন খারাপ করা সব খবর।পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর মিছিল।সবকিছু মিলে কিছুই ভালো লাগছিলনা ।স্কুল আর ক্লাসের কথাই মনে পড়ছিলো বারবার।এর মধ্যে খবর এলো টেলিভিশনে ক্লাস হবে। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ বেশ মজা লাগলো শুনে।দিন গুনতে গুনতে এলো ২৯ মার্চ । স্মার্টবোর্ড- এ ডিজিটাল পাঠ মুগ্ধ করেছে জাওয়াদকে। সে এখন পড়ার টেবিলে।
দেশে করোনা ভাইরাস বিস্তারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটিকালীন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’নামের এই যুগান্তকারী উদ্যোগে জাওয়াদের মত প্রায় এক কোটিরও বেশী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ফিরেছে পড়ার টেবিলে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাইরে বের না হয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচারিত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসসমূহ মনোযোগ দিয়ে দেখার ও আত্মস্থ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পাঠদান কার্যক্রম চলছে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেই ক্লাসসমূহ আবার পুনঃপ্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া ক্লাসসমূহ ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে। যদি কোনো শিক্ষার্থী কোনো ক্লাস দেখতে না পারেন তাহলে সে উল্লেখিত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ক্লাসটি দেখতে পারবেন।
শিক্ষক ক্লাস শেষে পাঠদানকৃত বিষয়ের ওপরে বাড়ির কাজ দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করবে এবং স্কুল খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দেবে। বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
করোনার দূর্যোগে লেখাপড়ামুখী রাখতে সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ ইতোমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক,শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। অভিভাবক এস,এম, নাসিরউদ্দিন বলেন,“ছেলেমেয়েরা ভীষণরকম পাঠবিমুখ হয়ে পড়ছিলো।বুঝিয়ে শুনিয়েও পড়ার টেবিলে বসানো যাচ্ছিলনা।এখন টিভি ক্লাস স্বস্তি এনে দিয়েছে। একদিকে যেমন দেশসেরা শিক্ষকদের ডিজিটাল পাঠ লাভের সুযোগ হয়েছে তেমনি মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখাতে এটি কার্যকর হয়ে উঠেছে।সরকারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার”।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রথমদিন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কিছুটা বিরক্তির কারণ হয়েছে অনেকেরই। কিন্তু আজ(৩০ মার্চ) ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাদ দেয়াতে স্পষ্ট শোনা গেছে প্রতিটি লেকচার।জুম করে দেখানো হয়েছে বোর্ডের লেখা।
এদিকে, প্রথম দিনের ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেসব আপত্তি জানিয়েছেন সেগুলো ইতোমধ্যে সরকারের নজরে এসেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য।
রোববারের ক্লাসগুলোর প্রচার শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সাদা বোর্ডের লেখা নিয়ে আপত্তির বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি, অন্য কোনো ক্লাসে এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক রাখা হবে না। বোর্ডে যেসব লেখা দেখানো হচ্ছে সেগুলো আরও জুম করে বড় করে দেখানোর বিষয়ে কাজ চলছে।”
বর্তমানে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে সংসদ টিভিতে প্রচারের জন্য ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভালো শিক্ষকদের দিয়েই ক্লাসগুলো করানো হচ্ছে। “সংসদ টিভিতে এসব ক্লাস দেখে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজগুলো করে রাখতে হবে। স্কুল খুললে সেগুলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষককের কাছে জমা দিতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকায় ক্লাস টেস্টগুলো মিস হচ্ছে, এই বাড়ির কাজ দিয়ে সেগুলো পূরণ করা হবে।”
যাদের বাসায় টিভি বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাদের কী হবে, এই প্রশ্নে প্রবীর ভট্টাচার্য্য বলেন, “এক শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে, আমরা সে বিষয়টিও মাথায় রাখছি।কোনো শিক্ষার্থীই যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। বাসায় টিভি বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় কেউ যদি এসব ক্লাসে অংশ নিতে না পারে তাদের আমরা আলাদাভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করব।”
এ যাবৎ ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাসের রুটিন প্রকাশ করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর।পরের সপ্তাহের রুটিন আগামী ১ এপ্রিল প্রকাশ করা হবে। সংসদ টিভির পাশাপাশি এ টু আইয়ের ফেসবুক পেইজেও সকল ক্লাসের ভিডিও দেখা যাচ্ছে।যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিনই টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সবাইকে বাসায় থাকার, সুস্থ থাকার ও নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং এ শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক, সংসদ টেলিভিশনের সব কলাকৌশলী এবং এটুআইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
Discussion about this post