এস,এম, পারভেজ
সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ আমাদেরকে আশা যুগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন- নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। বিধবা, দুঃস্থ মহিলা ও শিশুদের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে খুবই ইতিবাচক। করোনাভাইরাসের বর্তমান সংকটকালে নিম্ন আয়ের নাগরিকদের বেশিরভাগই হারিয়েছেন কাজ। এই দুঃসময়ে রাষ্ট্র তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, এটা এক বড় সুসংবাদ। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করবেন। একই সাথে আমাদেরও উচিত হবে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খেটে খাওয়া এবং অসহায়দের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
একথা সর্বজনস্বীকৃত যে সকল জাতীয় দূর্যোগে সরকারের পাশাপাশি জনগণ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে না আসলে কোনমতেই তা মোকাবেলা সম্ভব নয়।ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্তরের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ও শিল্পমালিকসহ বিত্তশালীগণ এগিয়ে এসেছেন।একই কাতারে শামিল হয়েছেন প্রশাসন ও সাধারণ জনগণও। এরপরও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে অর্ধাহার অনাহারে থাকা মানুষের হাহাকার।বেদনাক্লিষ্ট বৃদ্ধ, শিশু, মহিলার ছবি।এতেই প্রতীয়মান হয় অভাবী মানুষের তুলনায় সাহায্যের অপ্রতুলতা!এখনও দেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ও বিত্তশালীরা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। অনেক রাজনৈতিক নেতা ও সংসদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেও নিজ এলাকায় তৎপর হতে দেখা যাচ্ছেনা। বাংলাদেশের সকল বিত্তশালী ও সরকারী- বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল যার যার এলাকায় মানবতার সেবায় ঝাপিয়ে পড়লে টিভি, পত্রিকায় উপোস ও অসহায় মানুষের ছবি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়তো।
অন্যদিকে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর দল তাদের ক্ষুদ্র সাধ্য নিয়ে সারা দেশে সাহায্য বিতরণ করছে রাতদিন।রাত জেগে তারা এলাকার মানুষের খোঁজ খবর রাখছে। চেষ্টা করছে কীভাবে ঘরে থাকা মানুষদের খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়, তাদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়া যায়?
অতএব ধনবান কেউ ধন বিলাতে এলে কর্মীবাহিনীর কোন অভাব হবেনা।
দেশের চিকিৎসক. নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবকরা রাতদিন কাজ করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।সরকারী কর্মকর্তাগণ এবং আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ রাতের ঘুমকে হারাম করেছেন করোনাকে প্রতিরোধ করতে।গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সংবাদ সংগ্রহ কাজের পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের সেবায় তৎপর। অন্যদিকে মা্নবিক আবেগে পরম আন্তরিকতায় এগিয়ে এসেছেন শিক্ষক সমাজ।বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশ টাকা করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে অনুদান দিচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাঁদের বেতনের একটা অংশ তুলে দিয়েছেন মানবতার কল্যাণে।একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানের পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ভাবুন সেই ছেলেটির কথা, যে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার কাছে আছে তিনশ’ টাকা। সেই টাকা দিয়ে দিতে চাইলো কভিড-১৯ সংক্রমণের এই সংকটকালে অসহায় মানুষের সেবায়। ছেলেটি বললো—আমি তো ছোট মানুষ, বেশি টাকা নেই। আয় করি না। আয় করতে পারলে আরও টাকা পাঠাতাম।আরও ভাবুন ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের ৮৭ বছরের বৃদ্ধা খালেদা বেগমের কথা যিনি প্রাণঘাতী মহামারি কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের সাহায্য তহবিলে হজের জন্য জমানো ৫ লাখ রুপী দান করলেন ।ঘরের অবোধ শিশুটিও বাবার কাছে আবদার করা দশটি টাকা দান করতে চাইছে দুখী আর একটি শিশুর খাবার কিনতে!
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী অনুরাধা। টিফিন না খেয়ে সেই টাকা একটি মাটির ব্যাংকে জমাতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। ঘরে নেই খাবার। এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করেই মাটির ব্যাংকটি নিয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাসের কাছে হাজির সে। উদ্দেশ্য, তার জমানো টাকা নিয়ে গরিব দুস্থদের জন্য কিছু করা।
সে তুলনায় বাংলাদেশের সেই একহাজার ‘হাজারকোটিপতি’রা কি না করতে পারেন! করোনা দানবের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ঘরবন্দি হয়েছে মানুষগুলো্। দুদিন আগেও ওরা কাজ করে খেয়েছে।শুধু ওরা কেনো, পুরো বিশ্বে এখন সবাই কর্মহীন । তাইতো ওদের অবজ্ঞা করা যাবেনা। করুণা প্রদর্শন করাও যাবেনা ওদের! আমাদের সবার দায়িত্ব তাদের সম্মানের সাথে আপৎকালীন এই সময়টুকু পার করতে সাহায্য করা।ক্ষিধের জ্বালায় ওরা বাহিরে জমায়েত হলে, রাক্ষসী করোনার জন্য তা আরও সুবিধে হবে, আর সমাজের জন্য হবে ভয়ংকর! মনে রাখতে হবে স্রষ্টার সৃষ্টিকে অবহেলা করে স্রষ্টাকে তুষ্ট করা যায় না। মানুষের দুঃখ ও ব্যথায় ব্যথিত হয়ে, তাকে মনে প্রাণে অনুভব করে, তার প্রতিকার করার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে ধর্মের শিক্ষা।
Discussion about this post