করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নাগরিকদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সেবা দিতে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। তথ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদনসহ প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এসব প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনা সম্পর্কিত নানা তথ্যের পাশাপাশি মহামারি এ সংক্রমণ রোধে এসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা প্রদানে বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে সরকারের আইসিটি বিভাগ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তথ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এসব প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট প্রকাশ করা হচ্ছে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়িত তৈরি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক এ প্ল্যাটফর্মগুলো হলো- লাইভ করোনা টেস্ট ডটকম, করোনা অ্যাকশন বট (ক্যাব), কল ফর ন্যাশন ডটকম, প্রবাসী হেলপ লাইন ডটকম এবং স্টার্টআপ ডট গভ ডট বিডি। সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ করোনা শনাক্তে আনছে ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার অ্যাপ’। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রিয় ডটকম করোনার প্রাদুর্ভাব এলাকা ভিত্তিক বিশেষ ম্যাপ তৈরি করছে। করোনা সম্পর্কিত গুজব ঠেকাতে যৌথভাবে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ভাইবার। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বৈশ্বিক এ মহামারিতে অনেকেই প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে আসছেন। আমরাও আইসিটি বিভাগ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এগুলোকেই একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসা, সমন্বয়ের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
লাইভ করোনা টেস্ট ডটকম
ওয়েব অ্যাপভিত্তিক লাইভ করোনা টেস্ট ডটকম প্ল্যাটফর্ম (livecoronatest.com) থেকে ব্যবহারকারী জানতে পারবেন তিনি কতটা করোনা ঝুঁকিতে আছেন। পল্গ্যাটফর্মটিতে সংরক্ষিত প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানা যাবে। আবার নাগরিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে পারবে।
করোনা অ্যাকশন বট
স্বয়ংক্রিয় বার্তা আদান-প্রদান প্রযুক্তি বা চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশন ‘করোনা অ্যাকশন বট’ ডেভেলপ করেছে দেশীয় স্টার্টআপ কোম্পানি ‘হেডলেস স্টার্টআপ’। বটটি এখন আইসিটি বিভাগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যুক্ত রয়েছে। পেজটিতে আসা কোনো ভিজিটর মেসেজ বাটনে ক্লিক করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করোনা-সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করছে এই বট। এতে প্রথমেই করোনা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য যেমন, করোনা কী, লক্ষণ কী, কীভাবে ছড়ায়, প্রতিরোধে করণীয় প্রভৃতি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীকে প্রদান করে এ চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশনটি। এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করলেও উত্তর দেবে বটটি। আছে করোনা সম্পর্কিত কুইজও। কুইজে অংশ নিয়ে এ বিষয়ে কতটুকু জানা আছে তা ঝালাই করে নেওয়া যাবে।
করোনা শনাক্ত করবে অ্যাপ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে ভীতি দূর করতে, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আশপাশের কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা জানতে ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ নামে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই অ্যাপটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে টেলিটক এবং অ্যাপটির কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড। ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ অ্যাপটি আপাতত পরীক্ষামূলক স্তরেই রয়েছে। শিগগির অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর এবং আইওএস স্টোরে পাওয়া যাবে। তবে ইতোমধ্যে অ্যাপটি এপিকের মাধ্যমে (http:// coronaidentifier.teletalk.com.bd) অনেকেই ব্যবহার শুরু করেছেন।
সম্পূর্ণ অ্যাপটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট দপ্তর আইইডিসিআরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর লোকেশন ব্যবহার করে কমিউনিটিতে করোনাভাইরাস কতটা সংক্রমিত হয়েছে, তার একটা স্ট্যাটাস জানা যাবে। আশপাশে কোনো কভিড-১৯ সংক্রামক রোগী বা কোয়ারেন্টাইনে ব্যক্তি রয়েছেন কিনা সে বিষয়ে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
অ্যাপটির মাধ্যমে কিছু টেস্ট করারও সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আশা করছি এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের দেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অ্যাপটির পরবর্তী সংস্করণে স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে আরও কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হবে।
কল ফর ন্যাশন ডটকম
উদ্যোক্তাবান্ধব কল ফর নেশন ডটকম প্ল্যাটফর্মটি ডেভেলপ করেছে আইসিটি বিভাগের মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন প্রকল্প। এ প্ল্যাটফর্মের আওতায় ‘কভিড-১৯’ প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজে বের করতে অনলাইন প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়েছে। বৈশ্বিক এ মহামারিকে রুখে দিতে যে কোনো প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে এতে অংশ নেওয়া যাবে। আগামীকাল ৭ এপ্রিল পর্যন্ত এতে নিজেদের প্রজেক্ট সাবমিট করতে পারবেন গবেষক, উদ্ভাবক, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি মহামারির এ সময়ে ব্যবসা, স্বাস্থ্য, বিনোদন এবং লজিস্টিক-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা ও সমস্যার সমাধানও খোঁজা হবে এ প্ল্যাটফর্মে। ১৭ এপিল প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করা হবে। ঠিকানা : Callfornation.com
প্রবাসী হেলপ লাইন ডটকম
প্রবাসী হেলপ লাইন ডটকম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসীরা করোনা পরিস্থিতিতে নানা ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন। বিশেষ করে প্রবাসীরা যে দেশে বা স্থানে অবস্থান করছেন, ওই দেশ কিংবা এলাকার করোনাবিষয়ক জরুরি হটলাইন নম্বর পাবেন। এ ছাড়া ওই স্থানের নিকটবর্তী বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের জরুরি নম্বরও পাবেন প্রবাসীরা। ঠিকানা : Probashihelpline.com
স্টার্টআপ বাংলাদেশ
স্টার্টআপ বাংলাদেশ ডট গভ ডট বিডি আইসিটি বিভাগের একটি চলমান প্রকল্প। এ প্রকল্পেরও আওতায় করোনাকালীন নানা সমস্যার সমাধান বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং যোগাযোগ সম্পর্কিত উদ্ভাবন।
প্রিয়র করোনা ম্যাপ
সারাদেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য একটি ম্যাপ তৈরি করেছে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান প্রিয়। এই ম্যাপে করোনা আক্রান্ত এলাকা, হাসপাতাল, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, আইসোলেশন, প্রবাসী বাংলাদেশি, মানবতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদি এলাকা তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে। প্রতিদিন শতশত নিউজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আপডেট করা হচ্ছে এই ম্যাপ। এই কার্যক্রম করোনা সময়ে সচল থাকবে। পাশাপাশি আপনার এলাকার কোনো তথ্য যদি আপনি যুক্ত করতে চান, তাহলে সেটাও ম্যাপে যুক্ত করা যাবে। নিজেদের এলাকার তথ্য দিতে ‘পিন সাজেশন’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এই ম্যাপের মাধ্যমে বিপদের সময় সাহায্যও চাওয়া যাবে। কারও কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে এই ম্যাপের ‘সাহায্য চাই’ বাটনটি চেপে তা চাওয়া যাবে। বিস্তারিত : corona.priyo.com ঠিকানায়।
ভুল তথ্য ঠেকাবে ভাইবার ও ডব্লিউএইচও
কভিড-১৯ সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে বহুভাষিক চ্যাটবটের মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করছে রাকুতেন ভাইবার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্বব্যাপী খুব শিগগির বিভিন্ন ভাষায় এটি পাওয়া যাবে। করোনাভাইরাস নিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভুল সংবাদ ও মিথ্যা তথ্য ঠেকানোই হবে এই চ্যাটবটের লক্ষ্য। স্বাস্থ্যবিষয়ক সঠিক তথ্য অনুসন্ধানকারীদের সহায়তার জন্য চ্যাটবটটি ইতোমধ্যে ইংরেজি, আরবি ও রুশ ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে এবং শিগগির এটি বাংলাসহ আরও ২০টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। এই বৈশ্বিক মহামারি নিয়ে সদ্য পাওয়া সংবাদ এবং এ নিয়ে জানতে চাওয়া সাধারণ প্রশ্নগুলোর ওপর চ্যাটবটটিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ভাইরাস সম্পর্কে ব্যবহারকারী কতটুকু জানে তা যাচাই করার জন্য চ্যাটবটটির মিথ বিভাগে রয়েছে অংশগ্রহণমূলক কুইজ। এই ভাইরাস মোকাবিলায় কভিড-১৯ সলিডারিটি রেসপন্স ফান্ডের মাধ্যমে ডব্লিউএইচওকে অর্থ সাহায্য প্রদানে ‘ডোনেট নাউ’ বাটন রাখা হয়েছে। চ্যাটবটটি এই লিংকের https:// vb.me/c6e9fa মাধ্যমেও পাওয়া যাবে।
Discussion about this post