করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দ্রুত তৈরি না হলে এককালীন লকডাউন ভাইরাসটিকে থামাতে পারবে না এবং হাসপাতালগুলোর নাজুক অবস্থা থেকে উদ্ধারে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হতে পারে। মহামারির গতিপথের একটি মডেল তৈরি করে মঙ্গলবার হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা এ কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র কভিড-১৯ সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছানোয় কড়া লকডাউন শিথিল করে দেওয়ার বিষয়টি সামনে রেখে তাঁরা এ সতর্কবার্তা দেন। এএফপি, সিএনএন ও গার্ডিয়ান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে
হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার সায়েন্স জার্নালে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অবশ্য গবেষকদের এ তথ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের তথ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা এই গ্রীষ্মে মহামারি সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে।
হার্ভার্ডের গবেষকদল জানিয়েছে, জটিল অবস্থার ক্ষেত্রে চিকিৎসাব্যবস্থা যদি উন্নত না হয় অথবা উপযুক্ত ভ্যাকসিন তৈরি না হয় তাহলে ২০২২ পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হতে পারে। করোনা সম্পর্কিত ঠাণ্ডাজনিত নিয়মিত মৌসুমি ব্যাধি হয়ে উঠতে পারে কভিড-১৯। তবে পূর্ববর্তী সংক্রমণের মাধ্যমে ইমিউনিটি সক্ষমতা কোন মাত্রায় পৌঁছাবে এবং কত দিন এটি স্থায়ী হবে, এ সব বিষয়সহ আরো অনেক কিছু এখনো জানা যায়নি। গবেষণাপত্রের মূল লেখক স্টিফেন কিসলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এটি পেয়েছি যে ক্রিটিক্যাল রোগীর সেবাদানে যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত সক্ষমতার মধ্যে কভিড-১৯ (সার্স-কভ-২) মোকাবেলায় একনাগাড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাবস্থা পর্যাপ্ত নয়।’
গবেষণাপত্রের সহ-লেখক মার্ক লিপস্টিচ লিখেছেন, ‘সামাজিক দূরত্বের সীমাবদ্ধতা যদি তুলে নেওয়া হয় তাহলে দ্রুত আবার এই ভাইরাস ফিরে আসতে পারে। সামাজিক এই দূরত্বের ব্যবস্থা কয়েক বছর পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দরকার হতে পারে।’
মার্ক লিপস্টিচ আরো বলেন, আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যারা একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তারা আবার আক্রান্ত হতেও পারে। তবে এ বিষয়টি এখনো জানা যায়নি। এদিকে সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি কার্যকর অস্ত্র। যদি আমরা সর্বোচ্চ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারি তাহলে আমরা এই ভাইরাসের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারি।’
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে ঘরে থাকার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু জরুরি কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ ভিন্নতা রয়েছে। যেমন মেইনে কেউ আদেশ অমান্য করে ঘরের বাইরে বের হলে তাকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে। পাশাপাশি তার এক হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এদিকে দেশটির পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলের কয়েকটি এলাকায় সব কিছু খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
Discussion about this post