ভেন্টিলেটর! করোনা চিকিৎসায় বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত একটি যন্ত্রের নাম। যেসব রোগীর সংক্রমণ খুবই মারাত্মক তাদের জীবন রক্ষায় কার্যকরী একটি যন্ত্র। রোগীর ফুসফুস যদি কাজ না করে তাহলে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটা ভেন্টিলেটর করে দেয়।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় দেশে ভেন্টিলেটরের পরিমান খুবই কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ১ হাজার ২৫০ টি (সরকারি হাসপাতালে ৫০০টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৫০টি) ভেন্টিলেটর রয়েছে।
আর এসব ভেন্টিলেটরের বাজার মূল্যও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতেরো কোটি মানুষের দেশে অন্তত পঁচিশ হাজার ভেন্টিলেটর থাকা দরকার।
মহামারী বিশ্বজুড়ে চলতে থাকায় ভেন্টিলেটর কেনাও সম্ভব হয়ে উঠছে না। ইতোমধ্যে দেশীয় ইলেকট্রনিক প্রতিষ্ঠান ওয়াল্টন ভেন্টিলেটর বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে এ-ই মুহুর্তে সাশ্রয়ী মূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরী করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য সানি জুবায়ের।
নিজের তৈরী ভেন্টিলের সম্পর্কে সানি জুবায়ের বলেন, আমরা বাইরের দেশ থেকে যে ভেন্টিলেটর আনি এগুলোর দাম অনেক বেশি। ঐ ভেন্টিলেটর বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়৷ শুধু যে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ তেমন না অনেক ক্যাটাগরি থাকে।
বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো ভেন্টিলেটরের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়া এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করা। আর এই কাজটা করা হয় মেকানিক্যাল ভাবে। আমার তৈরী ভেন্টিলেটর এই কাজটা পুরোপুরি করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, ভেন্টিলেটরের নলটা যখন শ্বাসযন্ত্রে ঢুকানো হবে তখন নির্দিষ্ট সময়ে বাতাসের প্রেসার, শ্বাস-প্রশ্বাসের রেট সিলেক্ট করে দেওয়া যাবে। আর রোগীর ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
আমি যদি রেস্পিরেটরি রেট ২৪ করে দেই তাহলে প্রতি মিনিটে ফুসফুস ২৪ বার খুলবে ও বন্ধ হয়ে অক্সিজেন সাপ্লাই করবে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করবে।
আমি আমার সিস্টেমটাকে এমনভাবে তৈরি করেছি যেটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে সক্ষম। তবে এটার কাজ হবে শুধুমাত্র শ্বাসক্রিয়াকে যান্ত্রিকভাবে চালনা করা।
করেনায় আক্রান্ত রোগীদের শুধুমাত্র শ্বাসক্রিয়া চালানোর কাজে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমার এই ভেন্টিলেটরটি শুধুমাত্র এই কাজটাই করতে সক্ষম তাই এটি ব্যবহার করলে সহজলভ্য এবং অনেক করোনা রোগীকে সেভ করা সম্ভব।
সানি জুবায়েরের তৈরী ভেন্টিলেটরটির মূল কাজ যেহেতু অক্সিজেন প্রবেশ করানো আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে নিয়ে আসা তাই এটাকে সম্পূর্ণভাবে একটা কন্ট্রোলার এবং রাজবেরি পাই নামক একটি সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। বিদ্যুৎ চলে গেলে ভেন্টিলেটরের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য এটিতে আইপিএস ব্যবহার করা যাবে।
এমন একটি ভেন্টিলেটার মাত্র সাত হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে আরো ডেভেলপমেন্ট করা যাবে বলে জানান তিনি।
সরকারের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে খরচ আরো কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। ভেন্টিলেটর তৈরীর সময় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সাথে কথা বলে চাহিদা অনুযায়ী এই ভেন্টিলেটর তৈরী করেছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কিভাবে ভেন্টিলেটরটি কাজ করছে তার একটা ভিডিও আমি ঐ চিকিৎসককে পাঠিয়েছি।
তারা বলেছে ঠিক আছে, এভাবেই ভেন্টিলেটর কাজ করে। এই মুহূর্তে সরকারী সহায়তায় এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরী সম্ভব বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সানি জুবায়ের ‘টিম অ্যাটলাস’ এর প্রতিষ্ঠাতা। টিম লিডার হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে প্রথম স্থান, মেক্সেলারেশন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আয়োজিত টেকনিভ্যাল ২০১৮-তে চ্যাম্পিয়ন এবং ন্যাশনাল রোবটিক ফেস্টিভাল ২০১৭-তে চ্যাম্পিয়ন হয়।
ন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াড ২০১৯ এ স্বর্ন জয়, ইন্ট্যারন্যাশলান রোবট অলিম্পিয়াড ২০১৯ এ ব্রোঞ্জ জয় করে। এছাড়া তারই নেতৃত্বে ২০১৯ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড রোবটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১৩ তম অবস্থান করে বাংলাদেশ।
Discussion about this post