আব্দুল কবীর ফারহান, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
লক্ষণ শুনে জানাবে করোনা সংক্রমিত হয়েছে কিনা। নিবিড় তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে সহায়তা করবে আক্রান্ত রোগীকে। করোনা সংক্রমিত রোগী ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সাথে গান, গল্প ও কবিতা বলে বন্ধুর মত থাকবে ব্যবহৃত অ্যাপস। পরবর্তীতে করোনামুক্ত হলে জানাবে রোগ নিরাময়ের খবর।
করোনায় এরকম ডাক্তারের ভূমিকা রাখবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি মোবাইল অ্যাপস। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায় বিশেষ সফলতা অর্জনকারী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী আহমেদ কাওছার করোনা সহায়তায় এই অ্যাপসটি তৈরির কাজ করছেন।
একজন ডাক্তার রোগীর লক্ষণসমূহ শুনে সংক্রমণের সম্ভাবনা জানায়। পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা বলে দেয়। একই ধরণের ভূমিকা রাখবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক এই মোবাইল অ্যাপসটি। এই অ্যাপস সূক্ষ থেকে সূক্ষ লক্ষণগুলোও ধরতে পারবে, যা বিশ্লেষন করে অ্যাপস নিজে থেকেই করোনা সংক্রমণের সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম হবে।
চীনের উহান শহরের ১৩ হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য বিশ্লেষন করে অ্যাপসটি তৈরির কথা জানান আহমেদ কাওছার। তিনি বলেন, এটি সর্বদা নতুন রোগীর ডাটা থেকে নিজে নিজে শিখবে। যেটি হচ্ছে অনলাইন মেশিং লার্নিং।
তিনি জানান, এটি বেশ কয়টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজের সমন্নয়ে একটি কমপ্লেক্স কাজ। বাংলা ভয়েস রিকগনিশনের মাধ্যমে রোগী ডাক্তার করোনার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবেন। এটি বাংলা স্পিস টু টেক্সট। এরপর সেই টেক্সট আবার বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ও মেশিং লার্নিং এর সাহায্যে এনালাইসি এবং মডেলিং করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করবে।
এছাড়াও রিয়েল টাইম মেশিন লার্নিং ও স্টাটিস্টিক্যাল লার্নিং এর সাহায্যে কোন রোগীর করোনার প্রভাবিলিটি নির্ণয় করবে, যা উহানের ১৩ হাজার রোগীর ডাটার উপর ভিত্তি করে ডেভেলপড করা হয়েছে। সেই প্রভাবিলিটির উপর ভিত্তি করে অ্যাপসটি রোগীকে একটি সাজেশন দিতে সক্ষম হবে।
এপসটিতে ছয় ধরনের ১৬ হাজার ইমোশন ডিটেকশন ডাটা দেওয়া হয়েছে, যা রোগীর ইমোশন বুঝার চেষ্টা করবে। এটি ব্যবহারকারীর সাথে কবিতা, গান, গল্প বলতে পারবে। যা কোন করোনা রোগী বা হোম কোয়ারেন্টিনে সবার বন্ধু হয়ে থাকবে। একজন রোগীর সাথে সরাসরি বাংলা ভাষায় কথা বলবে এই অ্যাপস।
করোনা সম্পর্কে এটি যে কোন প্রশ্নের উত্তর দেবে। সকল ধরণের তথ্য (নাম্বার, পুলিশ লাইন, আপডেট ইনফরমেশন ইত্যাদি) দিয়ে এর ব্যবহারকারীকে সহায়তা করবে। করোনা সন্দেহজনক একজন রোগীকে ডাক্তার এর ন্যায় প্রশ্ন করে তার লক্ষণ বিচার করে রোগীকে ভালো একটি দৈনিক রুটিন দেবে।
করোনা পরীক্ষা করে আবার আপডেট তথ্য অনুযায়ী রোগীর রুটিন পরিবর্তন করতে পারবে। নতুন করোনা রোগী সনাক্ত করার পাশাপাশি এটি ডাক্তারদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রাখতে পারবে বলেও জানান কাওছার।
তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামটি বর্তমান পরিস্থিতে একজন ডাক্তারের হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করবে। এই কাজটির জন্য আমরা বাংলা ভয়েস রিকোগনিশন, বাংলা ভাষা প্রসেসিং, বাংলা চ্যাটবট, মেশিং লার্নিং ক্লাসিফাইয়ার ও ওয়েব অ্যাপস ব্যবহার করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সকল কাজ সম্পন্ন। তবে এটিকে একত্রিত করে অ্যাপস আকারে সকলের ব্যবহার উপযোগী করতে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হবে। যা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই আমরা চাই এই পরিস্তিতিতে কেউ আমাদের সাথে এগিয়ে আসুক, যাতে আমরা দেশের জন্য কাজ করতে পারি।
প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ কাজটিতে আহমেদ কাওছারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী অভিষেক দাস এবং নোবিপ্রবির বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী এস কে ফয়সাল আহমেদ।
Discussion about this post