বিশেষ প্রতিবেদক
করোনা দানবের আক্রমণে স্থবির জনজীবন। গৃহবন্দী এই সময়টুকুতে তথ্য বলুন আর বিনোদনই বলুন ইন্টারনেটই ভরসা। ব্যবসায়ী এবং চাকরীজীবীগণ তাদের জরুরী কাজগুলো সারতে নেটদুনিয়ার শরণাপন্ন হচ্ছেন।এরমধ্যে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর অনলাইনে লেখাপড়ার জন্য পরিহার্য হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। সবমিলিয়ে প্রচন্ড এক চাপ এসে পড়েছে নেটের উপর । অথচ চাহিদাপূরণ হচ্ছেনা কারোরই। নেটের গতি গেছে কমে।আর পিকআওয়ারে কোন কাজই করা যাচ্ছেনা।তাই ব্যবহারকারীদের এক দাবী নেটের গতি বাড়ানো হোক।
কিন্তু এ বিষয়ে কোন সুখবর দেয়া যাচ্ছেনা! মোবাইল অপারেটর বিনামূল্যে সাময়িক যে তরঙ্গ বরাদ্দ চেয়েছিল, তা তারা পাচ্ছে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, এর বদলে সরকার তরঙ্গের নিলাম আগেভাগে করা ও দাম কিছুটা কম রাখা যায় কিনা, সেটা ভাবছে।ফলে আপাতত ইন্টারনেট সেবার মান এখন যা আছে সেটাই থাকবে। এর চেয়ে উন্নত হবে না।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেওয়া সাধারণ ছুটির মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিন অপারেটর রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক সরকারের কাছে বিনামূল্যে তরঙ্গ চেয়েছিল।
তাদের যুক্তি ছিল, সরকারের অনুরোধে গ্রাহকের জন্য তারা ইন্টারনেটের দাম বেশ কমিয়েছে। এখন সরকার বিনামূল্যে কিছুটা তরঙ্গ বরাদ্দ দিলে সেবার মান উন্নত করা যায়। অপারেটরেরা এও বলেছিল যে, কথা বলা বা ভয়েস কল কমে যাওয়া ও ইন্টারনেটের দাম কমানোর পর সব মিলিয়ে রাজস্ব কমে যাওয়ায় তাদের পক্ষে এখন উচ্চমূল্যে তরঙ্গ কেনা সম্ভব নয়।
এ ছাড়া সরকারের কাছে যে তরঙ্গ পড়ে আছে, তা কোনো মূল্য সংযোজন করছে না বলেও মন্তব্য ছিল অপারেটরদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘বিনামূল্যে তরঙ্গ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো অবস্থাতেই সেটা আমরা করতে পারি না। কাজটি করতে গেলে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এই অবস্থায় সেটা সম্ভব হবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় কারণটি কারগরি। এখন যদি আমরা তরঙ্গ দিইও, সেটা যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো বসিয়ে কাজে লাগাতে তিন মাসের মতো সময় লেগে যাবে।’অবশ্য অপারেটরেরা এর সঙ্গে এক মত নন। তারা জানিয়েছে, তরঙ্গ দিলে সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকদের সুবিধায় ব্যবহার করা যাবে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এরপর ইন্টারনেটের ব্যবহার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির খবর জানিয়েছিল রবি আজিয়াটা। গ্রাহকসংখ্যায় শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির কথা জানালেও শতকরা হার জানায়নি। বাংলালিংকও ব্যবহার বৃদ্ধির কথা জানায়।
ফলে বাড়তি চাপে ইন্টারনেট সেবার মান কমে যায়। হংকংভিত্তিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যাল লকডাউনের সময় ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৮ এপ্রিল। এতে দেখা যায়, ২৭ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর–জি) ইন্টারনেট সেবার গড় ডাউনলোড গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৯ মেগাবাইটের বেশি। ৮ মার্চ দেশে করোনা–আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ইন্টারনেটের গতি কমতে থাকে, মার্চের শেষ সপ্তাহে যা নেমেছে ৭ দশমিক ৮ মেগাবাইটে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেশি ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই তরঙ্গ পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। মানে হলো, এ দেশে তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক বেশি, যা সেবার মান কমিয়ে দেয়। যেমন, বাংলাদেশে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক ১২ লাখ ৯০ হাজারের মতো। পাকিস্তানে তা ১২ লাখ ৩০ হাজার, মিয়ানমারে ৪ লাখ, থাইল্যান্ডে ২ লাখ ৮০ হাজার।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘ইন্টারনেটের ব্যবহার ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ তৈরি হওয়া বাড়তি এ চাপ সামাল দিতে বাড়তি তরঙ্গের কোনো বিকল্প এ মুহুর্তে আমাদের হাতে নেই। জরুরি ভিত্তিতে এ তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়া গেলে ১ সপ্তাহের মধ্যে এর সুফল সারা দেশের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া সম্ভব, এতে সেবার মান নিয়ে জনগণের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব হবে । সাহেদ আলম আরও বলেন, ‘আপদকালীন সময় মোকাবিলায় ফেরতযোগ্য এ তরঙ্গ বরাদ্দ দিতে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করছি।’
তবুও আশায় অপারেটর
Discussion about this post