নিউজ ডেস্ক
বুধবার রাত অবধি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এর প্রতিবেদন বলছে, এখন অবধি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে একমাত্র করোনামুক্ত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, ৬৩টি জেলায় এ যাবৎ ৭১০৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ১৬৩ জন। তবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের একমাত্র জেলা রাঙামাটি, যেখানে এখনো করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ প্রতিবেশী জেলা খাগড়াছড়িতে এদিনই নারায়ণগঞ্জ ফেরা একজনের শরীরে করোনা পজেটিভ মেলে।
এর আগে ১৬ এপ্রিল আরেক পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের এক ব্যক্তির করোনা পজেটিভ আসে। এরপর বান্দরবানের থানচি, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশ সদস্যসহ আরো চারজন আক্রান্ত হয়ে মোট পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের ল্যাব টেস্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বুধবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় করোনা শনাক্ত হওয়া রোগী খাগড়াছড়ির প্রথম করোনা রোগী। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে করোনা সংক্রমিত হলো। তবে এখনো সংক্রমণের বাহিরে রয়েছে পাহাড়ের রাজধানী খ্যাত রাঙামাটি জেলা। অবশ্য রাঙামাটির লংগদুর এক বাসিন্দা পেশায় ট্রাকচালক হবিগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।
রাঙামাটির বেতবুনিয়ার এক মারমা তরুণ নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় করোনাক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং ভৈরবের এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত রাঙামাটির মেয়ে এক সরকারি কর্মকর্তাও করোনা পজেটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
তবে রাঙামাটি জেলায় এখনো কোনো করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়া যায়নি।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানাচ্ছে, ২৯ এপ্রিল রাত অবধি এই জেলা থেকে মোট ২২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে, এদের মধ্যে ১৩২ জনের রিপোর্ট এসেছে এবং প্রতিটি রিপোর্টই নেগেটিভ। বাকি রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে। একই সময়ে জেলায় মোট ১ হাজার ৭৭৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে, এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ১ হাজার ২৬৮ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ৫০৯ জন।
কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৪৭৮ জনের এবং বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১২৯৯ জন।
এর বাইরে রাঙামাটির রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি এবং রাঙামাটি সদরে তিনজন মারা যান করোনার উপসর্গ নিয়ে। এদের মধ্যে দুজন আইসোলেশনে ছিলেন। এদের তিনজনকেই করোনা রোগীদের মতোই দাফন ও দাহ করা হয়। কিন্তু মৃত্যুর পরে পাওয়া রিপোর্টে তিনজনের কারো শরীরেই করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু সারাদেশ যখন করোনায় হাঁসফাঁস করছে, সেই সময় ৬ হাজার ১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় জেলাটি কোনো যাদুতে করোনামুক্ত, এটা ভাবছেন সকলেই। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে রাঙামাটির জনসংখ্যা ৬ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন। এই বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে এ যাবৎ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২২১ জনের।
বিষয়টি স্বাভাবিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে, রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, আসলে আমরা যাদেরকে সন্দেহভাজন পাচ্ছি, তাদের সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এখন সুস্থ কাউকে ধরে তো আর নমুনা সংগ্রহ করার কোনো মানে নাই।’
এখন পর্যন্ত রাঙামাটি করোনামুক্ত থাকার কারণ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, রাঙামাটির প্রশাসন সারা দেশের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম ছিলেন। ওনারা শুরু থেকেই রাঙামাটির সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে বাইরে থাকা মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিন ও প্রাতিষ্ঠানকি কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করেছেন। কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেননি। জেলার মানুষও অনেক বেশি সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন।’ একইসঙ্গে রাঙামাটি জেলার ভৌগলিক অবস্থান, দুর্গমতা এবং হ্রদবেষ্টিত হওয়ার কারণে কিছু সুবিধাও মিলেছে বলে জানান তিনি।
তবে ‘এখনই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই’ জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না, কোনোভাবেই নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। কারণ বিপদ এখনো কাটেনি। আর করোনামুক্ত শেষ পর্যন্ত থাকা যাবে, এমনটাও ভাবা উচিত হবে না।’
কি করে রাঙামাটি জেলা সারা দেশের চেয়ে ভিন্ন হয়ে শেষ অবধি করোনামুক্ত রাখা গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের চেষ্টা ও রাঙামাটিবাসীর সহযোগীতা সচেতনতা আন্তরিকতার কারণে এখনো আমরা করোনামুক্ত আছি। তবে নিরাপদ নই এখনো আমরা, করোনামুক্তও থাকতে পারব এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই জন্য সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনোভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিকে ঢিলেঢালা করা যাবে না। বাসায় থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের নিরাপদ থাকতে হলে সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। আমি গত দুদিন মনে হচ্ছে মানুষ একটু ঢিলেঢালা মুডে এসেছে, এই জন্য মোবাইল কোর্টকে আরো সক্রিয় করেছি এবং আইন-শৃংখলা বাহিনীও কঠোর হয়েছে। রাঙামাটি জেলায় প্রবেশের যে পথগুলো আছে, সবগুলো পথ আমরা আরো কঠোর করেছি। সবাইকে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
Discussion about this post