শিক্ষার আলো ডেস্ক
২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। সুসমন্বিত ও কল্যাণধর্মী জীবনযাপনে সচেতন, কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ সৎ ও প্রগতিশীল দৃষ্টিসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত চকবাজার চট্টেশ্বরী রোডে অবস্থিত ‘চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ ’ বন্দর নগরীর বুকে এমনই একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ‘রিসার্চ ফর এডুকেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাডেমী ট্রাস্ট’ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদগণের পরিচালনায় এই বিদ্যালয়টি ২৩ বছরের পথপরিক্রমায় সচেতন অভিভাবকের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে করোনাকালীন ২০২০ সালে ১৬ হাজার এবং ২০২১ সালে ১০ হাজার অনলাইন ক্লাসের মাইলফলক অতিক্রমকারী একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ ’ বিশেষ পরিচিতি লাভ করে।
এই প্রসঙ্গে স্কুল অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্যপরিষদের সভাপতি(চট্টগ্রাম অঞ্চল) অধ্যাপক হাবীব রহমত উল্লাহ জানান , আধুনিক কারিকুলামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা শিক্ষার্থীদের শিখনক্রিয়ায় কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করি। প্রথমত:মানবতাবাদী শিখনতত্ত্ব- এক্ষেত্রে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের স্তরে নেমে এসে তাদের বন্ধু হয়ে শ্রেণিশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করেন।দ্বিতীয়ত: Brain Storming বা মাথা খাটানো পদ্ধতি-এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য আলোচনার পর কিছু সমস্যা সমাধান করতে দেবেন, যা তারা বুদ্ধি খাটিয়ে সমাধান করবে।এতে করে ঐ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়।তৃতীয়ত Group Discussion বা দলগত আলোচনা-এতে ৪/৫ জনের একটি দল গঠন করে দেয়া হয় যাতে তারাপাঠ সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করে ধারণা পরিষ্কার করতে পারে।চতুর্থত Pair Teaching বা জোড়া শিক্ষণ- এখানে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাথে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রদের সাথে জুড়ে দেয়াহয়। এতে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থী পড়া ভালো বুঝতে পারেনি যারা তাদের শিখনে সাহায্য করে। এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আধুনিক পদ্ধতি।এ ছাড়াও রয়েছে Postbox Solving Method, Mind Mapping Method সহ বেশ কিছু অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি।
ট্রাস্ট ট্রেজারার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাল্টিমিডিয়া এবং ওভারহেড প্রজেক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে এই স্কুলের শ্রেণীকক্ষকে অত্যন্ত সহজবোধ্য ও আনন্দময় করে তোলা হয়েছে।খানকার শিক্ষকগণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্লে – নার্সারী ক্লাসগুলো ছোট্টমণিদের জন্য সাজানো হয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে।মজার সব সিডির মাধ্যমে বর্ণ মালা ও সংখ্যায় হাতেখড়ি হয় ওদের।এখানে সকল ক্লাসের কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামলূক। একজন অভিজ্ঞ বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার পরিচালনা করছেন এই শিক্ষা কার্যক্রম। এখানে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক ক্লাসরুম ও সময়সূচী।
সহ–পাঠক্রমিক কার্যাবলী ও স্কাউটিং
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মো: মো. আমজাদ হোছাইন জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুর সৃজনশীল ক্ষমতার পরিপূর্ণ বিকাশে অত্যন্ত সজাগ চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল।প্রতি বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রণীত বাংলা উচ্চারণের ক্লাস,আবৃত্তি ,বিতর্ক,গানের ক্লাস, চিত্রাঙ্কন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। ইংলিশ লিসেনিং ও স্পিকিং এ পারদর্শীতা অর্জন করার জন্য রয়েছে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব। আউটডোর-ইনডোর গেমসের পাশাপাশি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রতিদিন প্রাত্যহিক সমাবেশে শরীর গঠনমূলক ব্যয়াম করানো হয়।এ ছাড়া স্কুল অধ্যক্ষ বাংলাদেশ স্কাউট, চট্টগ্রাম জেলা রোভার এর সহকারী কমিশনার অধ্যাপক হাবীব রহমত উল্লাহর নেতৃত্বে কাব, বয় ও রোভার স্কাউটিংয়ের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চৌকষ ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।জাতীয় পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পরীক্ষায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জাতীয় জাম্বুরীতে এই স্কুলের ৪ জন ছাত্র প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পুরস্কার লাভের গৌরব অর্জন করেছে । ২০২০ সালে আরও ৬ জন শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। সম্প্রতি আমাদের দুজন স্কাউট মুনতাসির ইসলাম ওয়াছি (১০ম শ্রেণি), শ্রাবণ আহমেদ ইমন(৮ম শ্রেণি)দক্ষিণ কোরিয়াতে ২০২৩ সালের বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।
১৮ জানুয়ারী ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত South Asian Pacific Region & 11th National Scout Jumbury তে অংশ গ্রহণের দুর্লভ সুযোগ পেয়েছে এই স্কুলের স্কাউট টিম!
এছাড়া শিক্ষার্থীর মননশীলতা বিকাশের জন্য নিয়মিত দেয়ালিকা ও বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সকল দিবসসমূহ পালিত হয় সাড়ম্বরে।
বিজ্ঞানাগার ও বিজ্ঞান ক্লাব
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে প্রচুর আগ্রহ জন্মায় ও বুঝতে সহজ হয় ,ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে,সেজন্য এই্ স্কুলে রয়েছে উন্নত বিজ্ঞানাগার। বিজ্ঞান ক্লাবে নানা সৃজনশীল কর্মকান্ড এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা,গণিত অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড , রোবোটিকস কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনস্ক হিসাবে গড়ে তুলতে সফল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আবাসিক ব্যবস্থাপনা
স্কুল সভাপতি ও ট্রাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াসার সাবেক ডিএমডি মো: গোলাম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ছাত্রদের শিক্ষা, শৃঙ্খলা ,আচরণে পরিপূর্ণতা প্রদান ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনের নিমিত্তে আবাসিক ছাত্রদের আমরা প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার চর্চার মাধ্যমে দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করে সুশৃঙ্খল অবস্থান নিশ্চিত করেছি।একজন হোস্টেল সুপার ,এক বা একাধিক রেসিডেন্ট টিচার এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাউস টিউটর ও ধর্মীয় শিক্ষকের সমন্বয়ে হোস্টেল পরিচালিত হয়ে থাকে।
শিক্ষাবান্ধব এসব শিক্ষাকার্যক্রমের সুফল পেয়েছে ‘চট্রগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ ’।প্রতিবছরের মত ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১৪ জন এ প্লাসসহ ৭৪ জন এ গ্রেডে এবং ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১৪ জন এ প্লাসসহ ৭0 জন এ গ্রেডে এবং শতভাগ উত্তীর্ণের গৌরব অর্জন করেছে স্কুলটি।
Discussion about this post