বিশেষ প্রতিবেদক
দেশের স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২ হাজার ৩০০ কলেজে পড়ছেন।করোনা সংক্রমণের কারণে বিপাকে পড়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ২৯ লাখ শিক্ষার্থী। শুধু পাঠদান বন্ধ নয়, একের পর এক বাতিল হয়েছে বিভিন্ন বর্ষের সব পরীক্ষাও। অনার্স চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অর্ধেক হবার পরই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান। ফলে পরীক্ষার কারণে ঝুলে আছে এসব শিক্ষার্থীও।
যারা পরীক্ষা শেষে চাকরির জন্য অপেক্ষা করছিল তারাও রয়েছে নানা শঙ্কায়। পরীক্ষা কবে হবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তারা। তবে করোনার মধ্যেই গত সপ্তাহে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি জানুয়ারিতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা যায় তবুও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরীক্ষা জট কাটিয়ে উঠতে অন্তত ৩ বছর সময় লাগবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস কোর্স দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স ফাইনাল এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এসব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। ডিগ্রি পাস কোর্সে প্রতিটি বর্ষে ৩৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া মাস্টার্স ফাইনালে পরীক্ষা হবার কথা ছিল ৩১টি ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, আগস্ট পর্যন্ত মাস্টার্স প্রিলিমিনারি, অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা হবারও কথা ছিল। প্রতিটি বর্ষের ৩১টি বিষয়ে পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে এই পরীক্ষার সূচিও করা যায়নি। অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা অর্ধেক হবার পর বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান। এতে আটকে আছে এসব শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক পরীক্ষাও। এছাড়া শতাধিক পরীক্ষা আটকে আছে বিভিন্ন প্রফেসনাল কোর্সের। সব মিলিয়ে ৪ শতাধিক পরীক্ষা আটকে আছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান বলেন, আমরা কলেজ খোলার অপেক্ষায় আছি। কলেজ চালু হলেই স্থগিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। নতুন সূচিও দেওয়া হবে। একই দিনে একাধিক বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষা জট কমিয়ে ফেলার চিন্তা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে যদি এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে হাঁটবে। কলেজে পাঠদান বন্ধ থাকলেও পরীক্ষা নেওয়া হবে। এটাও জট কমানোর একটি উত্তম পথ বলে মনে করা হচ্ছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতে, যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষার্থীর চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বয়সে বড়। তাই এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে সে আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হবে। তাছাড়া পরীক্ষা জট কমাতে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সেশনজট কমানোর জন্য ২০১৪ সালে একবার ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়। এ কারণে শিক্ষাবর্ষ ১ বছরের স্থলে ৮ মাস হয়েছিল। পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণ বড় বিষয় নয়, পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট কমানোই ছিল ঐ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য।
তবে পাঠদানের প্রতিও নজর দেওয়া কথা জানিয়েছেন অভিভাবকরা। দেশের প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদানের চেষ্টা চলছে। যদিও সফলতার হার খুবই কম। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—শিক্ষার্থীদের মনে রাখা উচিত কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সিংহভাগ কারিকুলাম শিক্ষার্থীকে তার নিজ উদ্যোগে সম্পন্ন করতে হয়। এই মহামারি চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে এবং নিজ নিজ বাড়িতে বসে তার কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠক্রম গ্রহণ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।
দেশের স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২ হাজার ৩০০ কলেজে পড়ছেন। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সম্মান পড়ানো হয় প্রায় ৭০০ কলেজে।
Discussion about this post