চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী আফিফ রহমান (ছদ্মনাম)। দু’টি টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা খরচ যোগাতেন। নদী ভাঙ্গনে শিকার পরিবারের এ সন্তানের বাবা-মায়ের কাছেও কিছু টাকা পাঠাতেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দেশ কার্যত লকডাউন। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এসব মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীর ওপরে।
ওই শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়াতে তার দু’টি টিউশনি বন্ধ। থেমে গেছে ছোট-ভাই বোনদের পড়াশোনা। আর বাড়িতেও খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। পরের সপ্তাহের খাবার কিভাবে জুটবে এই চিন্তা ক্রমশই তাকে ঘিরে ধরছিলো। আত্মসম্মানবোধ থেকে কাউকে বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারছিলেন না নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই শিক্ষার্থী।
ঠিক এই সময়ে এগিয়ে আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। গত ১২ এপ্রিল থেকে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। তারা ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা সংগ্রহ করে ফেলেন। কিন্তু এরপরই আসলো সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ…। পরিচয় গোপন রেখে নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের পথচলায় সঙ্গী হতে হবে। আর এই কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে ফেললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম। তিনি ‘গুগল ডকস’ এর মাধ্যমে শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি তালিকা তৈরি করেন এবং ইতোমধ্যে ৪২ শিক্ষার্থীর জন্য তাদের সংগ্রামী পথকে সহজ করতে কিছু উপহার পাঠান। কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এখানেই থেমে থাকতে চাইছেন না। তারা নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আরো দুইটি প্রকল্প চালিয়ে যেতে চান।
অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম জানান, তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে কমপক্ষে ৫০০ পরিবারের তিনদিনের খাবারের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি ডাক্তার, পুলিশসহ যারা করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের জন্য পিপিই, স্যানিটাইজার এবং অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা। এছাড়া তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে অটোমেটিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার বসানোর পরিকল্পনাও করেছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এই তিনটি প্রকল্পের জন্য আমাদের প্রাথমিক বাজেট ছিলো ১০ লাখ টাকা। যার প্রায় ৭৫ শতাংশই আমরা সংগ্রহ করে ফেলেছি। শিগগির আমরা আমাদের পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন করবো।
এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জীবন যুদ্ধে লড়াই করা শক্তি পাচ্ছেন এমন মনোভাব ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভয়ংকর এই দুর্যোগের সময় কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এই সময়ে শিক্ষক এবং বড় ভাইরা যেভাবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই আমাকে সাহস যুগিয়েছে। চুয়েট পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে গর্ববোধ করছি।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এসব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীরা একদম সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসে। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে তারা নিজেদের এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের ব্যয়ভার কিছুটা হলেও বহন করে। দেশের এই মহাদুর্যোগের সময় তাদের অবস্থা আসলেই দুঃখ জাগানিয়া। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের চুয়েট পরিবারে কনিষ্ঠতম সদস্যদের জন্য এগিয়ে আসছে, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
Discussion about this post