বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের যাত্রীছাউনিতে বসানো হয়েছে একটি স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার যন্ত্র। পথচারীরা আসছেন, হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফিরে যাচ্ছেন আবার। পুরো কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে কোনো হাতের স্পর্শ ছাড়াই। স্বয়ংক্রিয় এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস গবেষণা সংগঠন রোবো মেকাট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশনের (আরএমএ) সদস্যরা। এরই মধ্যে শহরের তিনটি জায়গায় এই স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার বসিয়েছেন তাঁরা। আরও বেশ কয়েকটি তৈরির কাজ চলছে।
স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার যন্ত্রে মূলত ব্যবহার করা হয়েছে একটা পাম্প, সেন্সর, রিফিল পাত্র এবং একটি ডিসপেনসার। যখন কেউ ডিসপেনসারে হাত রাখেন, সেন্সরে সংকেতের মাধ্যমে পাম্প চালু হয়। সেই সঙ্গে রিফিল পাত্র থেকে প্রতিবার ৪ মিলিলিটার স্যানিটাইজার বের হয়।
এই রোবটিকস গবেষণা সংগঠন রোবো মেকাট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশনের (আরএমএ) সদস্যরা হলেন- মো. আবদুল্লাহ, আবু আদনান, শাফিন হাসনাত, সৌরভ রক্ষিত, মো. হাসিবুল হোসেন, অর্ণব দাস এবং আদিত্য বড়ুয়া ।তারা নগরীর জিইসি মোড়ে দুই সপ্তাহের জন্য একটি বাসা ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২২ মার্চের মধ্যেই তাঁরা তৈরি করে ফেলেন একটি স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার যন্ত্র, যেটি জিইসির যাত্রীছাউনি মোড়ে স্থাপন করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানালেন, স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার যন্ত্রটির ধারণক্ষমতা ২ লিটার। একবার পূর্ণ করা হলে এটি প্রায় চার হাজার মানুষ ব্যবহার করতে পারেন। আরেকটা সুবিধার দিক হলো, এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পৌঁছে যাচ্ছে সহজে।
আরও পরিকল্পনা জানতে চাইলে মো. আবদুল্লাহ জানান, যেসব হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে, সেসব জায়গা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও বিশটি স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার যন্ত্র স্থাপন করবেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও কিছু যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু দেশের এ অবস্থায় এটা বানানোর জন্য অনেক প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমরা আপাতত ২০টির বেশি তৈরি করতে পারছি না।’ একেকটি যন্ত্র তৈরিতে খরচ পড়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। আরএমএর সাবেক সদস্যরা ছাড়াও চুয়েটের শিক্ষার্থীরাই এই অর্থের জোগান দিয়েছেন। ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি এবং নগরীর জিইসি মোড়ে একটিসহ মোট তিনটি স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার যন্ত্র স্থাপন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘এখন পুরো জাতি একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের মেধা ও অর্থ দিয়ে সবার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, এটা সবার জন্যই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এম এ আউয়াল বলেন, ‘চুয়েটের শিক্ষার্থীরা মেডিকেলের প্রবেশপথেই এই যন্ত্রটি বসিয়েছেন। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে শত শত রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, ডাক্তার যাতায়াত করেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তাঁদের এ কাজটি নিশ্চয়ই বড় অবদান রাখবে।’
Discussion about this post