করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সম্প্রতি করপোরেট, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার (‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’) সুবিধা চালু করেছে। এই সংকটকালে মোবাইলফোন ও ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সেবায় লোকজনের কথা বলার হারও বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে বিভিন্ন অফিস ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার। তবে তা বেড়েছে বাসাবাড়িতে।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেছেন, সরকার ঘোষিত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি শুরু হলে এবং বাসাবাড়িতে নতুন সংযোগ না লাগলে ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট ব্যবহার আরও কমতে পারে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বুধবার (২৫ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দুঃসময়ে আমাদের ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবাদাতারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান ডাটার (ব্যান্ডউইথ) পরিমাণ দ্বিগুণ করেছে। কেউ কেউ অতি সাশ্রয়ী নতুন প্যাকেজ চালু করেছে। কথা বলার ক্ষেত্রেও কেউ কেউ সাশ্রয়ী প্যাকেজ চালু করেছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আরও নতুন খবর বা সুসংবাদ পাবেন দেশবাসী।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, “‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সুবিধা চালুর পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক তথা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়ে গেলে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার (অফিসে) আরও কমবে। অন্যদিকে এরইমধ্যে বাসাবাড়িতে (হোম ইউজার) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে আমাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে মোট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, যারা শুধু করপোরেট বেজড অপারেটর তাদের সমস্যা হয়ে যাবে। যারা দুটোই (করপোরেট ও হোমবেজড), তারা হয়তো কোনোভাবে ব্যবসায় চালিয়ে যেতে পারবেন।
আমিনুল হাকিম বলেন, ‘১০ দিনের ছুটিতে বাসাবাড়িতে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে। বাসাবাড়িতে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার দ্বিগুণ হলেও সংযোগ সংখ্যা হিসেবে তা অনেক কম।’
বাসাবাড়িতে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের হার বেড়ে গেলে বা নতুন সংযোগের চাহিদা তৈরি হলে কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, বাজারে ডিভাইসের কোনও সংকট হবে কিনা জানতে চাইলে আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, ‘এখন ডিভাইসের কোনও সংকট নেই। যে পরিমাণ ডিভাইস বাজারে আছে তা দিয়ে এক থেকে দেড়মাস চলবে। কিন্তু সংকট দীর্ঘায়িত হলে তখন গ্রাহকরা সেবা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হবেন।’
মোবাইল অপারেটরগুলোকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারী আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠান লেভেল থ্রি ক্যারিয়ার লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে মোবাইল অপারেটরগুলোর ব্যান্ডউইথ চাহিদা বেড়েছে। একাধিক অপারেটর এরইমধ্যে তাদের অতিরিক্ত চাহিদার কথা জানিয়েছে। ২৬ মার্চ থেকেই বাড়তি ব্যান্ডউইথ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুনায়েদ বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলোর চাহিদা দেখে আমরা বুঝতে পারি মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। অপারেটরগুলো প্রতিনিয়ত আপগ্রেড করছে। বাড়তি ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছে। আমরা এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটে ব্যবহৃত হচ্ছে ৬০০ জিবিপিএস, বাকি ৮০০ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায়।
Discussion about this post