চীনে নতুন করোনা ভাইরাস মহামারিতে রূপ নেয় কিনা সেই আতঙ্কে ভুগছে বিশ্ব। গত ডিসেম্বর থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে দেশটিতে। এই ভাইরাস সার্স ভাইরাসের মতোই প্রাণঘাতী।
চীনের উহান শহর থেকে এটি প্রথম ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি শনাক্ত করেন বিজ্ঞানী লিও পুন। তিনি মনে করেন, ভাইরাসটি কোনো প্রাণীতে সংক্রমিত হয়েছিল এবং এটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে।
হংকং ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ স্কুলের ভাইরোলজিস্ট লিও পুন বলেন, ‘ভাইরাসটি নিউমোনিয়ার মতো অসুস্থতা তৈরি করে। কিন্তু কোনো অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দেয় না। তবে করোনা ভাইরাস কতোটা মারাত্মক হয়ে উঠবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।’
চীন সরকার বলছে, এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে অন্তত ৫০০ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। তবে বেসরকারি হিসাব বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি। চীনের নতুন নতুন শহরেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া বিভিন্ন দেশ কীভাবে এই ভাইরাস মোকাবেলার প্রস্তুতি নেবে, আক্রান্ত রোগীদের কীভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং কী ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে, সে সম্পর্কে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনাও দিয়েছে সংস্থাটি। নতুন এই ভাইরাসের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে বাংলাদেশও।
করোনা ভাইরাস কী?
করোনা ভাইরাস হচ্ছে ভাইরাসে একটি বড় গ্রুপ। অর্থাৎ অনেক ধরনের করোনা ভাইরাস রয়েছে। প্রাণীদের মধ্যে এ ধরনের ভাইরাস কমন। বিরল ক্ষেত্রে এই ভাইরাস বিজ্ঞানীদের ভাষায় জুনোটিক হতে পারে। অর্থাৎ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে এমন ৬টি করোনা ভাইরাস এতদিন পরিচিত ছিল। এখন যেগুলোতে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে সেগুলো নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস। আগে থেকে অপরিচিত এই ভাইরাস ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?
মার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে। সার্স ভাইরাসের জন্য বিজ্ঞানীরা খাটাশ জাতীয় বিড়ালকে দায়ী করেছেন। করোনা ভাইরাস তখনই সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে আসবে যখন কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে। ভাইরাসটি কতটা সংক্রামক, তার উপর নির্ভর করে কাশি, হাঁচি বা হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ছুঁয়েছে এমন কিছু স্পর্শ করার পর সেই হাত দিয়ে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে সংক্রমণ হতে পারে। এমনকি রোগীর বর্জ্য থেকে চিকিৎসকরাও আক্রান্ত হতে পারেন।
করোনা ভাইরাস কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
চীনে নতুন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়ছে আতঙ্ক। গত ডিসেম্বর থেকেই এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে চীনে। এটি অনেকটা সার্স ভাইরাসের মতো মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে।
ভাইরাসটি নিউমোনিয়া ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং তারপর অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় সাড়া দেয় না। ভাইরাসটিতে সংক্রমণের লক্ষণ হচ্ছে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। এছাড়া জ্বর ও মাথাব্যথাও হতে পারে। এসব সমস্যা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ, বয়স্ক ও শিশুদের এই ভাইরাসে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসনালীর সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিপদ এ কারণে যে, এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। বিশেরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো আপনা আপনি চলে যায়। চিকিৎসকরা ব্যথা বা জ্বরের ওষুধ দিয়ে উপসর্গগুলো থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারেন। গরম পানিতে গোসল গলাব্যথা বা কাশি থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে।
এ সময় প্রচুর তরল পান করুন, বিশ্রাম নিন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান। রোগের উপসর্গগুলো যদি সাধারণ ঠান্ডার তুলনায় বেশি কিছু বলে মনে হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
নতুন করোনা ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। মার্স ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে ক্লিনিক্যাল
পরীক্ষা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট নতুন করোনা ভাইরাসটির ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। কিন্তু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
আপাতত প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, সবসময় সাবান দিয়ে হাতে ধোয়া; অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে।
সচেতন থাকাটাই মূল বিষয়। হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন। বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। পোষা প্রাণি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় এটি মানুষের জন্যও প্রাণঘাতী রোগের কারণ হতে পারে।
Discussion about this post